সে অনেককাল বর্তমানের কথা: এপ্রিল, ২০২৩

কাতার এয়ারওয়েজের একটা ওয়ানওয়ে টিকেটে করে গত নভেম্বরের ১৫ তারিখ ইংল্যান্ড আসি।

জীবনটা কেমন, তাইনা?
বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান আমি। মেডিকেলের থার্ড ইয়ার পর্যন্ত ঘুমিয়েছি মায়ের সাথে। ইন্টার পড়েছি ঢাকায়, মা ছিল সাথে। মেডিকেলে ফরিদপুর চান্স পাওয়ার পর আব্বা বাসা ঠিক করে দিলেন, বললেন, পারবানা একা থাকতে। মাকে নিয়ে রইলাম তিনটা বছর। ২০১৭ সালের ১ জানুয়ারি মা ফরিদপুর ছেড়ে কুমিল্লা আসেন, আমি সেদিন নতুন ক্যাম্পাসের হোস্টেলে উঠি। মাকে যখন বিদায় দেই বুকটা কেমন করে উঠেছিল যেন। মাঝেমধ্যে যখন অনেক মন খারাপ হয়, তখন মনটা আরো খারাপ করার জন্যে ওইদিনের কথা মনে করি। সেই আমার মাকে দেখিনা ৪ মাস পার হলো।

প্রচন্ড রোবটিক জীবন এখানে। ইমারজেন্সি ডিপার্টমেন্টে চাকরী করি, একেক সপ্তায় একেক রকম ডিউটি। আটটায় যেদিন ডিউটি থাকে সেদিন এলার্ম দেই ভোর ৬টায়। ঘুম থেকে উঠতে উঠতে বেজে যায় ৬:৩০ টা। দাত মাজি, কফি বানাই। গতদিনের কফির মগ ধুয়ে মতুন বানানো কফি ঢালি। গলায় আইডি কার্ড ঝুলায়ে কফির মগ পকেটে নিয়ে আর সবশেষে ফ্রিজ থেকে দুপুরের খাবার বের করে ব্যাগে নিয়ে বেরিয়ে পরি। রাস্তা পার হলেই বাস স্টপ। Hammersmith Hospital এর সামনে বাস স্টপ B থেকে উঠে পরি বাসে। কপাল ভাল হলে ৭ নাম্বার বাস ধরতে পারি, যেটা সরাসরি St Mary’s Hospital এর সামনে নামায়ে দেয়। আর নাহয় ৭২ কিংবা ২৭২ এ চড়ে  White City Station এ নেমে একটু হেটে  Wood Lane যেয়ে Hammersmith, City and Circle Line এর ট্রেনে চড়ে চলে যাই Paddington. সেখানে নেমে ৫ মিনিটের হাটার দূরত্বে আমার St Mary’s Hospital.
হাসপাতালে যেয়ে ড্রেস চেঞ্জ করে স্ক্রাব পরে নিতে হয়। স্ক্রাব মানে হচ্ছে সোজা কথায় ওটি ড্রেস। একেক হাসপাতালের/একেক ডিপার্টমেন্টের একেক নিয়ম। St Mary’s এর ইমারজেন্সিতে যেমন SHOরা পরে Olive Colour এর স্ক্রাব, রেজিস্ট্রাররা Green আর কমসালট্যান্টরা Purple, আর নার্সরা Blue. জয়েনিং এর সময় ৩ সেট দিয়েছিল ৬০ পাউন্ড এর বিনিময়ে, যেগুলো রোটেশন শেষ হলে আবার ফেরত দিয়ে তারপর টাকা ব্যাক নিয়ে হবে।

দেশে মা নাস্তা বানায়ে তারপর ঘুম থেকে ডেকে তুলতো। বউ এসে তেল মাখতো উঠার জন্যে। উঠে নাস্তা করে চা খেয়ে তারপর যেতাম হাসপাতালে। বিকালে বাসায় এসেই খাবার রেডি।
আর এখানে প্রতিবেলা খাবার চিন্তায় মরে যাই।
সেই নভেম্বরে আসার পর থেকেই তিনবেলা মুরগি আর খিচুড়ি নয়তো পোলাও খাচ্ছি। জুনে দেশে যাবো। কী কী খাবো তার লিস্ট করি দাড়ান:
কুমিল্লায়:
ডায়নার খাসির পায়া, তুন্দুল রুটি আর ভাজি দিয়ে সকালের নাস্তা
ডায়নার মুরগির ঝালফ্রাই
ডায়নার গ্রিল
ডায়নার হালিম
ডায়না মানে হোটেল ডায়না, এখন যেটা রাজগঞ্জ। আগে টাউনহল ছিল যেটা আরকি
Silver Spoon এর থাই সুপ
Elite Palace এর ওরিও শেক, Burger, Fried Rice, Chicken Sizzling
গোমতীর পাড়ের পিয়াজু, আলুর চপ

ঢাকায়:
সুলতানস ডাইন এর কাচ্চি
সুলতানস ডাইন এর কাচ্চি
সুলতানস ডাইন এর কাচ্চি
স্টার এর লেগ রোস্ট, খাসির রেজালা
পিজ্জা বার্গ এর পিজ্জা
পিজ্জা বার্গ এর সেট মেনু
পিজ্জা বার্গ এর
পাবুলুম এর বার্গার
চিলক্স এর ওরিও শেক
টেক আউট এর বার্বিকিউ বিফ চিজ বার্গার উইথ কার্লি ফ্রাইস
প্রিমিয়াম এর লাড্ডু
চিলক্স এর ডেজার্ট আনছিল নতুন একটা, ওইটা খাবো
বিউটির লাচ্ছি
বিউটির লেবুর শরবত

ভাবতেই কেমন লাগে জীবনটা এখন যেন ডিউটি, রান্না আর মাঝেসাঝে সেশন নেয়া আর অকারণ আফসোস করার মাঝে আটকে গেল আমার। অথচ ৪ মাসে কত কিছু পাল্টে গেল। প্ল্যাটফর্ম ভেংগে গেল। আর্টসেলের থার্ড এলবাম এলো।

শরীরটা খারাপ যাচ্ছে গত কয়েকটা দিন ধরে। কাশি, হালকা জ্বর, গলাব্যাথা। লোকাম বুক দিয়ে রেখেছিলাম, ক্যান্সেল করলে দেশে যাওয়ার টিকেটের টাকা দিবো কইত্থেকে এই চিন্তায় আর ক্যান্সেল করলাম না। প্রচন্ড বাজে গেল গত দুইটা দিন। পাঁচ হাজার মাইল দূরে থাকা ভালোবাসার মানুষটার বুকে মাথা রেখে তার গায়ের গন্ধ নিতে ইচ্ছা করছে খুব।

FA
37 Vellacott House
W12 0UQ
London

Tags:

0 thoughts on “সে অনেককাল বর্তমানের কথা: এপ্রিল, ২০২৩”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top