সে অনেককাল বর্তমানের কথাঃ মার্চ ২০২১

icddr,b তে জয়েন করার প্রথমদিনে আমাদেরকে পুরো হাসপাতাল ঘুরে দেখানো হলো। কয়টা ডিভিশন আছে, কোথায় কী হয়, কিভাবে এই হাসপাতাল চলে – ইত্যাদি ঘুরে ঘুরে দেখলাম।

পুরা সময় জুড়ে একটা ব্যাপার মাথায় ঘুরছিল। ইন্টার্নশিপের শুরুতে একে ওকে জিজ্ঞেস করতাম এইটার মানে কী, মানে কী, এইখানে কী হয়, ওইখানে কী হয়- এভাবে ঠেকে ঠেকে সবকিছু শিখতে হইতো। কেউ নিজে থেকে কিছু বলে দিতো না, বা দেখায়ে দিতো না। পরিচিতির ব্যাপারগুলো ছিল অধিকাংশই সহকর্মীদের থেকে- মানে সিনিয়র ভাইয়া, বা পুরনো ইন্টার্ন যারা- তারা সবকিছু শিখায়ে দিতেন। স্যার লেভেলের মানুষদের কাছ থেকে খুব কমই শিখার সুযোগ পাওয়া যেত।
আমার সবসময়ই মনে হতো যে, ইন্টার্নশিপের শুরুতে যদি একটা ইন্ট্রোডাকশন সেশন হতো, তাহলে অনেক বেশি সুবিধা হতো সবার জন্যে।

আজকে দ্বিতীয়দিন ছিল। কী কী রোগী এই হাসপাতালে ভর্তি হয় এবং কিভাবে এখানে ট্রিট করা হয় – এগুলো নিয়ে ট্রেনিং সেশন হলো আজকে। আজকে এবং আগামীকাল এই ট্রেনিং সেশন চলবে। ব্যাপারটা এমন না যে আমরা এই ট্রিটমেন্ট পারিনা, বা শিখিনাই। যে কয়জন ডাক্তার নতুন জয়েন করেছেন তারা সবাই এই ট্রিটমেন্ট পারেন, অসংখ্য রোগীকে চিকিৎসা দিয়েছেন। তারপরেও এই ট্রেনিং সেশন আয়োজনের উদ্দেশ্য হচ্ছে নতুন পরিবেশে খাপ খাওয়াতে সাহায্য করা + যাদের অধীনে আমরা কাজ করবো তাদের সাথে পরিচিত হওয়া এবং ফ্রেন্ডলি হওয়া।

ওরিয়েন্টেশন ট্রেনিং এর রুটিন

ট্রেনিং সেশনের প্রথম ক্লাস ছিলঃ কোন রোগী কোন ওয়ার্ডে থাকে- এক ওয়ার্ড থেকে আরেক ওয়ার্ডে ট্রান্সফার কিভাবে করে, আইসিইউতে রোগী ট্রান্সফার এর ইন্ডিকেশন কী? কোন রোগী শুরু থেকেই আইসিইউতে থাকবে – এসব। শুনলে খুব হাস্যকর মনে হতে পারে। অধিকাংশ চিকিৎসক এবং চিকিৎসা সংক্রান্ত মানুষ মনে মনে ভাববেন যে এখানে আর শিখানোর কি আছে। যারা এমন ভাবছেন, তাদের কাছে আমার অনুরোধ, ইন্টার্নশিপ এর প্রথমদিনের কথা একটু মনে করে দেখেন। ডাক্তাররা সিনিয়র হওয়ার পর অনেকেই ভুলে যান যে একদিন তিনি নিজেও জুনিয়র ছিলেন – ডাক্তার সমাজের দুরবস্থার পেছনে এটা একটা অন্যতম কারণ বলে আমার মনে হয়। 

আজকের দিনের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ঘটনা হচ্ছে icddr,b এর executive director স্যার নতুন জয়েন করা সবার সাথে মিটিং করলেন।

মিটিং এর শুরুতে স্যারের প্রথম প্রশ্ন, তোমরা ছেলেরা একপাশে আর মেয়েরা আলাদাপাশে বসেছো কেন?

This is how amazing that person is.

সবার সাথে আলাদা করে কথা বললেন।

স্যারের একটা কথা খুব ভাল লাগলো, তোমরা সবাই নিজের যোগ্যতায় বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ চিকিৎসা বিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠানে কাজ করার সুযোগ পেয়েছো, সেজন্যে তোমাদেরকে অভিনন্দন। You should be proud of yourselves and you should congratulate yourself.

লক্ষ করুন, চান্স পাইলেই হবেনা, এবার এইটা করতে হবে- অনার্স পাইতে হবে, পোস্টগ্র‍্যাজুয়েশন না করলে লাভ নাই – এই ধরনের কথা বলে শুরুতেই ডিমোটিভেট করেন নাই, বা বিরক্তি তৈরি করেন নাই- যেইটা অনেকেই করে থাকেন, বিশেষত বাবা-মায়েরা। 

আমাদের মধ্যে কারা কারা বিসিএস হলে এই কাজ ছেড়ে চলে যাবে- এই প্রশ্নটা করলেন। ৬ জনের মধ্যে ৩ জন বললেন যে বিসিএস হলে icddr,b ছেড়ে যাবেন। উনি বললেন যে এটা নিজেদের সিদ্ধান্ত, যেকেউ চাইলে যেকোন সময় বিসিএস হলে চলে যেতে পারে।
বিসিএস খারাপ, দেশের অবস্থা ভালোনা, বা আইসিডিডিআরবি বেশি সেরা – এ ধরনের কথা বলেননি।

সবচেয়ে ভাল লাগলো এই কথাটাঃ

“বাইরে কোন মানুষ যদি icddr,b সম্পর্কে খারাপ কিছু বলে তাহলে তোমাদের দায়িত্ব তাদেরকে বুঝিয়ে বলা।
এবং আমাদেরকে এসে বিষয়টা জানাবে এবং জিজ্ঞেস করবে যে এমনটা কেন হলো। নিশ্চয়ই আমাদের কোন ভুল ছিল, নাহলে কেন ওই মানুষটার কাছে আমাদের সম্পর্কে ভুল ইম্প্রেশন যাবে?”

মনে হচ্ছে আমার জীবনে দেখা সবচাইতে সেরা মানুষটার সাথে পরিচিত হয়েছি, কথা বলেছি। আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে উনি icddr,b তে ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন Clinical Fellow হিসেবে।

পরবর্তীতে কী হবে জানিনা, এখনো পর্যন্ত মনে হচ্ছে যে, অসাধারণ সুন্দর একটা জায়গায় কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। যারা গাইড করেছেন, সাহায্য করেছেন, বিশেষত হাসনাত সুজন ভাই, নিলয় শুভ  দাদা, Shamsul Arefin ভাই, গাজী সালাউদ্দিন মামুন ভাই, ফেরদৌস রহমান ভাই, Rajib Biswas দাদা- আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানোর ভাষা আমার জানা নাই।

এত কথা বলার উদ্দেশ্য হচ্ছে একটা অনুরোধ।ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ ( বর্তমান বংগবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ) এ অনেক ভাল কিছু পরিবর্তন এসেছে নতুন অধ্যক্ষ স্যার, উপাধ্যক্ষ ম্যাম এবং ছাত্রলীগের নতুন নেতৃত্বের হাত ধরে। আশা করি তারা যথাযথ পদক্ষেপ নিয়ে ইন্টার্নশিপের শুরুতে একজন নতুন ডাক্তারকে তার পেশাগত জীবনের শুরুটা ভালোভাবে করার সুযোগ তৈরি করে দিবেন।

Tags:

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top