পড়ো পড়ো পড়ো – মুনির হাসান

আমি বই পড়িনা। কখনোই পড়িনা। ফেসবুক আসার পর কোনদিন পড়তে চাইনাই। কয়েকজন কাছের বন্ধু খুব বই পড়তে বলতো আমাকে, এখনো বলে। মাঝেমধ্যে এক দুই পৃষ্ঠা পড়তে যাই, কিন্তু কঠিন লাগে। অনেকক্ষণ একদিকে মনোযোগ দিয়ে রাখতে পারিনা, ফোনে হাত চলে যায়।
সেদিন কাকে যেন বলছিলাম এইসব কথা- \”আমি পড়তে চাই কিন্তু পড়তে পারিনা\”। যাকে বলছিলাম উনি আমাকে একটা কোটি টাকার পরামর্শ দিলেন। সেটা হচ্ছে Goodreads নামের একটা জায়গায় একাউন্ট খুলে ফেলা। যাইহোক, বরাবরের মতই ফেসবুকের কল্যাণে আমি সেটা ভুলে গেলাম।
বইমেলা শেষ হলো অল্প কয়দিন হলো। আমার ইচ্ছা ছিল বইমেলায় যাবো। কিন্তু যাওয়া হয়নি। শিশু বিভাগে ডিউটি ছিল ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে। এবং ২৯ দিনের ওই মাসে আমি দুই দফায় অসুস্থ হয়েছি, যার কারণে বইমেলায় যাওয়া হয়নি। অবশ্য আমার ধারণা এইটা আমার নিজের বানায়ে নেয়া একটা এক্সকিউজ। অতটা ইচ্ছা ছিলনা হয়ত, তাই যাওয়া হয়নাই। সুলতানস ডাইনের বিরিয়ানি খাইতে তো ঠিকই যাই মাসে একবার।  
যাইহোক, রকমারী ডট কমের ৩৭% ডিসকাউন্টের মেসেজ, মেইল আর স্পনসরড পোস্টের যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে ভাবলাম কয়টা বই কিনবো। যেহেতু কোন না কোন এক্সকিউজ বানায়ে ফেলবো আমি আগেই জানি, তাই আগেই পে করে দিলাম।
অপদার্থবিজ্ঞান, অনুরাগ শাস্ত্র, ভাইরে আপুরে ২, পড়ো পড়ো পড়ো – এই কয়টা বই কিনলাম।
একটু আগেই বলছিলাম, বই পড়তে আমার কঠিন লাগে।যেসব মুভিতে ইনার মেসেজ থাকে সেগুলা আমার কাঠখোট্টা লাগে, এন্ডিং খারাপ হইলে বিরক্ত লাগে। আমি সহজ সরল বই, সোজাসাপ্টা সিনেমা পছন্দ করি। রুমমেট কে বলছিলাম যে- \” জ্ঞানী, একটা বই পড়মু। কি পড়া যায় কও তো।\” সে আমাকে খুব কঠিন সাধু ভাষায় লেখা একটা বই পড়তে কইলো। এক পৃষ্ঠা পইড়া আর জমলোনা। আমার বই পড়াও হইলোনা।
যাইহোক। একদিন হঠাৎ খেয়াল করলাম মানুষের কথা শুনতে আমার ভালো লাগে। বানানো গল্প উপন্যাস না, মানুষের নিজের জীবনের গল্প।নিজেও নিজের কথা কইতে ভালোবাসি। লিখতে আরো বেশি। ফাও প্যাচাল পাড়া আমার খুবই পছন্দের কাজ। মুনির হাসান স্যার ম্যাথ অলিম্পিয়াডে উপস্থাপনা করতেন। আমার জীবনে উনার পরিচয় এইটাই। কি সুন্দর গুছায়ে কথা বলতেন স্যার। ভালো লাগতো।
বই অর্ডার করার সময় দেখলাম এবারের মেলায় স্যারের একটা স্মৃতিচারণ টাইপের বই আছে। নাম পড়ো পড়ো পড়ো। সেই থেকে কিনলাম বইটা।

একটা লোক, নাম খেয়াল নাই – উনি স্যারের মাথায় ছোটবেলায় \” ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি, ম্যাথ \” এর ভূত ঢুকায়ে দিছিলেন। এর কারণেই স্যার বুয়েটে পড়তে পারছিলেন। বইটা পড়ার সময় আমার ইচ্ছা করতেছিল খুব, যে স্যারকে মেসেজ দিয়ে জিজ্ঞেস করি ওই লোক এখন কি করেন, কই আছেন। মেসেজ দেওয়ার জন্যে স্যারের প্রোফাইলেও ঢুকছি,  পুরানো মেসেজগুলো দেখে এখন আর মেসেজ দেওয়ার সাহস করি নাই। ক্লাস ৯ এর বার্ষিক পরীক্ষা দিয়ে আম্মাকে ভুজুং ভাজুং বুঝায়ে ১ জিবি নেট কেনা ছোট্টফসু স্যারকে মেসেজ দিছিলো, \”আর ইউ দ্য রিয়েল মুনির হাসান?…. আই এম সো হ্যাপি, আই লাভ মুনির হাসান।\” …. স্যার আবার বাচ্চা ছেলের ওই মেসেজের রিপ্লাই ও দিছিলেন। বাচ্চা ফসু মুনির হাসান স্যার ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট এক্সেপ্ট করার পর আবার স্ট্যাটাস ও দিছিলো। ওই স্ট্যাটাস দেখে ফসুর ছোট্টবন্ধু জুনায়েদ কামাল নিবিড় তাকে মেসেজ দিছিলো- এতো ফালাইস না। উনারা সবার রিকুয়েস্ট এক্সেপ্ট করেন।
যাইহোক, ছোট্টবেলার খুব মধুর স্মৃতি ছিল ম্যাথ অলিম্পিয়াড। ওইখানে এই মানুষটাকে চিনতে পারছিলাম। আর তখন থেকেই মুনির হাসান স্যার, সোহাগ ভাই-  এই লোকগুলার উপর অসম্ভব একটা ভালোলাগা কাজ করতো। এদের মত হইতে চাইতাম। এখনো তাই চাই।
যাইহোক।

বই কেমন লাগছে?
ভাল লাগছে, বেশ ভালো লাগছে।ফাও প্যাচাল পাড়তে, পড়তে এবং শুনতে আমার ভালো লাগে।
বইটা পড়ে মুনির হাসান স্যারের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা নিয়ে আমার আরো জানতে ইচ্ছা করেছে, যেটা স্যার সজ্ঞানে এড়িয়ে গেছেন বলে লিখেছেন বইয়ের শুরুতে।
বই এর শেষে স্যারের পছন্দের মুভি, বই আর গানের লিস্ট দেওয়া আছে। এই জিনিসটা আরও বেশি ভাল লাগছে।

Disclaimer:
কেউ আবার ভাববেন না যে স্যারের বইকে আমি \”ফাও প্যাচাল\” বলছি। নিজের জীবনের কথা, পুরানো স্মৃতিচারণ এগুলাকে আমি ফাও প্যাচাল বলি। বই এর রিভিউ পড়ে বুঝতে পারছেন আশা করি ফাও প্যাচাল আমার কত পছন্দের জিনিস।

Note to self:
এই বছর বই পড়বো, ফেসবুক কম চালাবো বলে ঠিক করছি। মিনিমাম ১০টা বই পড়মু টারগেট করছি। ১টা পইড়ে ফেললাম। রইলো বাকি ৯।

Tags:

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top