ফাইনাল প্রফে মানুষ তিন কারণে ফেল করে।
- নিজের দোষে
- পরীক্ষার হলে নার্ভাস হয়ে
- কপাল দোষে
তৃতীয়টার উপর আমাদের তেমন হাত নেই, কিন্তু আমরা চাইলেই প্রথম আর দ্বিতীয় কারণটা অনেকাংশে কাটিয়ে উঠতে পারি। থার্ড ইয়ার থেকে শুরু করে ফিফথ ইয়ার পর্যন্ত যেমনই পড়াশুনা করে থাকো না কেন, প্রফের একমাস আগে এসে পড়া জরুরী। যারা আগে থেকে ভালোভাবে পড়াশুনা করেছো, তারা নিজের পড়াটা আরেকবার ঝালাই করে নিবা এই সময়ে। আর যারা খুব একটা পড়োনি, তাদের জন্যে এটাই শেষ সুযোগ।
আমি ধরে নিচ্ছি হাতে ১ মাস সময় আছে অর্থাৎ অক্টোবরের এক তারিখ থেকে তোমরা পড়া শুরু করছো। নভেম্বরের এক তারিখ থেকে যদি প্রফ শুরু হয় সেক্ষেত্রে আমাদের হাতে ২৫ দিন সময় আছে। এই ২৫ দিন সময়কে কিভাবে ম্যাক্সিমাম ইউটিলাইজ করা যায় সেই নিয়ে আজকের লেখাটা।
প্রথম কথা হচ্ছে, এই ২৫ দিনের মধ্যে প্রত্যেকদিন আধা ঘন্টা থেকে ৪০ মিনিট সময় আলাদা করে রাখবা শর্ট কেস দেখার জন্যে। ম্যাক্সিমাম ৪ জনের একটা group করে ফেলবা এক্সামিনেশন প্র্যাকটিস করার জন্যে, সবচেয়ে ভাল হয় তিনজনের group হলে। একজন সাবজেক্ট হবা, ওর উপর একজন এক্সামিনেশন করবা, আর বাকিরা দেখবা এবং ভুল ধরায়ে দিবা- এভাবে সবাই প্রতিদিন একবার করে প্র্যাকটিস করবা। কোন শর্ট কেস যেন বাদ না যায় এটা খেয়াল রাখবা। ছোট ছোট কিছু জিনিস যেমনঃ Patellar tap , Limb examination, Nail bed examination, Collapsing pulse দেখানো- এইসব আমরা প্রায়ই বাদ দিয়ে যাই, খেয়াল রাখবা এগুলাও যেন বাদ না যায়। আমরা রুমেই প্র্যাকটিস করতাম, কেউ চাইলে ওয়ার্ডে যেয়েও প্র্যাকটিস করতে পারো, তবে ওয়ার্ডে যাওয়া আসায় প্রচুর সময় চলে যায় এজন্যে রুমে প্র্যাকটিস করা তূলনামূলকভাবে ভালো মনে হয় আমার কাছে।
অনেকে বাসায় চলে যায় প্রফের আগের বন্ধে। বাসায় চলে গেলে একা একা এক্সামিনেশন প্র্যাকটিস করতে পারবানা, তাই আমার মনে হয় অন্ততঃ ফাইনাল প্রফের আগের সময়টাতে বাসায় যাওয়া উচিত না।
এই বিষয়ের উপর একটা ভিডিও আছে, চাইলে দেখতে পারো।
দ্বিতীয় কথা, যারা এক্সরে ইসিজি একদমই পারো না তারা সিনিয়র কোন ভাই বা কোন বন্ধুর কাছ থেকে ডেমো নাও বা ইউটিউবের ভিডিও দেখে এই দুইটা জিনিস শিখে ফেলো। ইসিজি শেখার জন্যে আমার চ্যানেলের ভিডিওগুলা দেখতে পারো।
কোন বিষয় কতদিন পড়বোঃ
- মেডিসিন ৯ দিন
- সার্জারি ৪ দিন
- আই ৩ দিন
- ইএনটি ৩ দিন
- গাইনি ৩ দিন
- অবস ৩ দিন
মেডিসিন সবচেয়ে বড়, এটাতে ফেল হয় সবচেয়ে বেশি- এজন্যে এটাতে সবচেয়ে বেশি সময়। কারোর কোন আলাদা বিষয়ে দুর্বলতা থাকলে ওইটাতে সময় বেশি নিতে পারো। এবার প্রত্যেকটা বিষয়ের ডিটেইলস দেখে নেই একবার।
গাইনি-অবসঃ
মোট ৬ দিন সময় নিবা গাইনি-অবস প্রস্তুতির জন্যে। ৫ দিনের মধ্যে সব পড়ার জিনিস শেষ করবা। আড়াই দিন পাবা একেকটার জন্যে। আমি দুই শিফট করে পড়তাম- সকাল আর রাত। সকাল বলতে ৯টা থেকে ২ টা। রাত বলতে ৬টা /৬ঃ৩০ টা থেকে ২টা পর্যন্ত। মাঝে খাওয়া, নামাজ, ঘুরা ফিরা, ডেটিং এসবও থাকতো। আরও ১ দিন সময় রয়ে যাবে। ওইদিন এক শিফটে পড়বা লং কেসগুলো। আর আরেক শিফটে পড়বা অসপি ( instrument , কাউন্সেলিং, প্রসিডিউর সহ সবকিছু )
যারা ফরিদপুর মেডিকেলের তাদের উদ্দেশ্যে বলছি, তোমরা সবাই হয়তো জানো অলরেডি যে, আমাদের গাইনি অবস বক্স কোশ্চেনের তিনটা পার্ট। একটাতে এনাটমি-ফিজিওলোজি-অপারেটিভ, দ্বিতীয়টাতে বিভিন্ন ডিজিজ আর তৃতীয়টাতে ক্লিনিকাল সিনারিও। প্রত্যেকটা থেকে একটা করে বক্স কোশ্চেন ধরেন ম্যামরা পরীক্ষায়।প্রত্যেকটাই সমানভাবে ইম্পর্ট্যান্ট। এনাটমি ফিজিওলোজি পড়তে খারাপ লাগবে হয়তো, কিন্তু কিচ্ছু করার নাই ,পড়তে হবে। গাইনি পড়বা আড়াই দিন, অবস পড়বা আড়াই দিন। আড়াই দিন মানে ৫ বেলা। ২ বেলা পড়বা এনাটমি -ফিজিওলোজি-অপারেটিভ এবং ক্লিনিক্যাল সিনারিও। আর বাকি ৩ বেলা পড়বা ডিজিজ।
যাদের আগে ভালো পড়া হয়নি, তারা এখন শুধু বক্স কোশ্চেন দেখে দেখে প্রত্যেকটা টপিক ধরে ধরে মূল জিনিসগুলা পড়বা। বুঝে পড়া, কন্সেপ্ট ক্লিয়ার করা- এই চিন্তা আপাতত বাদ দিতে হবে, কারণ প্রথমতঃ এখন বুঝে পড়ার মতন সময় নাই, আর দ্বিতীয়তঃ যদি তোমার আগে থেকে এই চিন্তা থাকতো তাইলে আগেই ভালো করে পড়ে রাখতা।
এফেমসির বক্স কোশ্চেন এবং গাইনি অবস এর কিছু দরকারী শীট পাওয়া যাবে এখানে।
মেডিসিনঃ
মোট পড়ার সময় ৯ দিন। ৯ দিনকে এভাবে ভাগ করে নিতে পারোঃ
- একদিন Cardiology
- একদিন Respiratory System, Hematology
- একদিন Neurology, Rheumatology
- একদিন Nephrology, Gastroenterology, Hepatology
- একদিন Endocrine
- একদিন Skin, Psychiatry, Infectious disease, heat related disorder, age related disorder, immunology, Genetic disorder এবং আর যা আছে হাবিজাবি
- দুইদিন Pediatrics
- শেষে একদিন এক্সরে, ইসিজি, ইন্সট্রুমেন্ট, লং কেস, শর্ট কেস। শর্ট কেস সম্পর্কিত পড়াগুলা এদিন পড়বা। এক্সামিনেশন তো আগে থেকেই করছো প্রতিদিন এক ঘন্টা করে।
যারা আগে একদমই পড়োনাই তারা এই পোস্টটা একবার দেখে আসতে পারো।
ইএনটিঃ
তিনদিন সময় ইএনটির পেছনে দিবা। একবেলা রাখবা অসপি পড়ার জন্যে, বাকি সময় ভাইভা- রিটেন এর জন্যে পড়বা। আগে যা পড়েছো তাই এখন আবার রিভাইজ দিবা, নতুন করে কিছু পড়ার দরকার নাই। যারা আগে কিছু পড়ো নাই, তারা অন্যদের কাছ থেকে খোঁজ নাও তোমাদের মেডিকেলের ম্যাক্সিমাম মানুষ কী পড়েছে। যদি সবাই গাইড পড়ে, তাইলে তুমিও গাইড পড়ো, যদি সবাই লেকচার পড়ে তাইলে তুমিও সেটাই পরো।
যারা ফরিদপুর মেডিকেলের, তাদের উদ্দেশ্যে, আমাদের সময় শফিক স্যার শুধু Nose আর Throat এর লেকচার নিয়েছিলেন। আমরা এই দুইটার জন্যে শফিক স্যারের লেকচার পড়েছিলাম, আর Ear গাইড থেকে। ইএনটিতে বক্স কোশ্চেন আছে, স্যার বক্স কোশ্চেন থেকে পড়া ধরেন প্রফে, বক্স এর বাইরেও জিজ্ঞাসা করেন। স্যারের লেকচার পড়লে সবই কভার হবে। যারা আগে কিছুই পড়ো নাই তারা এখন শুধু বক্স কোশ্চেন পড়ো, আর কেস হিসেবে যেগুলো থাকে ( Tonsillitis, DNS, Goitre, Hearling loss), সেগুলো শফিক স্যারের লেকচার থেকে পড়ো।
ফরিদপুর মেডিকেলের আই-ইএনটি ভাইভার কিছু প্রশ্নের কালেকশন এখানে দেওয়া আছে।
চলবে
Tags:
Surgery?
পোস্ট আপডেট করা হয়নি এখনো। করে দিবো কালকের মধ্যে। 🙂
kisui mathai dukhche na