এই পৃথিবীতে এক জাতের স্টুডেন্ট আছে যারা রাজ্যের পড়াশুনা করে , অথচ কাউকে ঘুণাক্ষরেও জানতে দেয়না।আবার আরেকদল আছে যারা এক লাইন পড়েই সেটার ঢোল পেটানো শুরু করে- কী পড়তেছে, কেমনে পড়তেছে, কিভাবে পড়তেছে- এইসব মানুষজনরে না জানাইলে তাদের পেটের ভাত হজম হয়না। আমি দ্বিতীয় দলের।
ইন্টারে পড়ার সময় জুয়েল ভাই এর এর সান্নিধ্যে আসা। আমি এই জীবনে সবচাইতে বেশি প্রভাবিত হইছি বোধহয় উনার দ্বারা। একদিন ভাই কি যেন একটা বললেন আমার লেখা নিয়ে।খুব গায়ে লাগলো। ওইদিন থেকে হাতের লেখা নিয়ে মজলাম। আজ অবধি ভাইয়ের লেখা কপি করার চেষ্টা করি। হয়না 😥।
তয় একদিন হবে, প্রচন্ড আশাবাদী আমি। 😈
তো যা বলছিলাম, জুয়েল মাকসুদুল হোসাইন হইতে চাইতাম। ভাইরে দেখতাম আমাদেরকে পড়ানোর আগে নিজে পড়তেন। আবার খুব গর্ব করে বলতেন যে প্রতিদিন উদ্ভাসে পড়ানোর আগে দুইঘন্টা করে পড়ে যান। গুরু জহরলাল স্যারও বলতেন যে, পড়ে না আসলে আমি পড়াতে পারিনা। তাঁদেরকে দেখে নাকি কি জন্যে জানিনা, আমিও টিউশনিতে যাওয়ার আগে প্রত্যেকদিন পড়ে যাইতাম। পরে দেখি যে মানুষ হাসাহাসি করে- ভ্যাঙ্গায় – ক্লাস টেন এর পোলাপান পড়াইতে আবার পইড়া যাওয়া লাগে।
একসময় ক্লাস ১০ পড়ানো বাদ দিলাম। কাছের এক বন্ধুর সাথে শেয়ারে ম্যাটস এর স্টুডেন্ট পড়ানো শুরু করলাম। কয়েকদিন পড়ানোর পর কম্পলেইন আসলো পোলাপান পড়া পছন্দ করতেছেনা। তারা আরও \”মজা\” চায়। আমি লিখে পড়াই এইটা তাদের ভালো লাগেনা, তাদের ধারণা আমি লেইখা লেইখা সময় কাটাই।ইত্যাদি আরও নানাবিধ সমস্যা।
ফার্স্ট ইয়ারের শুরুতে ঢাকা মেডিকেলের ডাঃ রাফিদ ভাই এর কিছু ফেসবুক পোস্ট পড়েছিলাম, ওইখান থেকে টেক্সট বই পড়ার আগ্রহ জন্মায়। ফার্স্ট প্রফের ভাইভা বোর্ডে এক্সটার্নাল স্যার কিছুক্ষণ আমার ভাইভা নেওয়ার পরে মাথা নাড়তে নাড়তে ম্যামকে বলতেছিলেন, বুঝলেন ম্যাডাম আজকালকার পোলাপান গাইটন পড়েনা। সব চটি পইড়া আসে। তো যেই একটু একটু পড়া পারতে শুরু করলাম, স্যার আবার বললেন, \” এই যে দেখেন, সুরসুর কইরা চটি বই এর মুখস্ত বুলি আওড়াইতেছে।\” 😅
ফিফথ ইয়ারে পড়ার সময় ইসিজি বুঝার চেষ্টায় লেকচার শেষ করেই দৌড় দেই, আর সিসিইউতে থাকা ইন্টার্ন ভাই হাসতে হাসতে জানায় যে আরে ব্যাটা MI ছাড়া আর কিছু লাগেনা।এই পাঁচ বছরে কতশত সিনিয়র ভাই এর সাথে দেখা হইলো কথা হইলো। কেউ বিরিয়ানি খাওয়ায়, কেউ বিড়ি সাধে, কেউ মিছিলে ডাকে, কেউ মসজিদে নিয়া যায়। কিন্তু আফসোস কেউ কোনদিন একটাবারও বলে নাই যে ভাই ক্লাস কর, বই পড়।
যাইহোক। ভাবলাম আমারে কেউ বলেনাই, আমি অন্ততঃ বলি। যে নক দেয় তারেই বলি ভাই পড়। যার সাথে দেখা হয় তারেই বলি, ভাই পড়। পড়লে দোষ নাই। মিছিলে যাবি যা, মিছিল থাইকা আইসা পড়। বিরিয়ানি খাইতে যাওয়ার আগে একটু পইড়া যা। নামাজ থাইকা আইসা পড়তে বয়। এক সময় ক্লাস-লেকচার সব শেষ হয়া গেল। আমরা অনেক সিনিয়র হইয়া গেলাম। জুনিয়রদের সাথে ওইভাবে দেখাসাক্ষাত হয়না। এখন আর ওই সুযোগটা নাই যে ডাইকা ডুইকা মানুষরে পড়তে বসাবো।
প্রফ দিয়ে বাসায় আজাইরা বইসা ছিলাম। এই সময়টাতে কি করমু বুঝতে পারতেছিলাম না। হুট কইরা একদিন ফিফথ ইয়ারে পড়ার সময় হুজুগে কেনা ক্যামেরা আর নতুন কেনা ট্রাইপড দিয়ে ভিডিও বানাইতে শুরু করলাম।
আমার ভাল্লাগে বানাই, যার ভাল্লাগে দেখুক।
পাগলের সুখ মনে মনে।
গতকালকে রাত্রে বহুত কষ্ট কইরা একটা ভিডিও বানাইলাম। মেডিকেলের থার্ড ইয়ার থেকে ফিফথ ইয়ারের পোলাপান দেখতে পারো।
Tags:
কিছু বিষাদ হোক পাখি
নগরীর নোনা ধরা দেয়ালে
ভুল রঙ এর ফুলগুলা হয়তো আমরাই। :’-)
ভাইয়া, জুয়েল ভাই এর সাথে কি এখনো যোগাযোগ আছে? উনি বিদেশে আছেন জানি। কিন্তু উনি চমক ভাইদের মতো কেন অনলাইনে আসলেন না এটা জানতে চাই।কেমন যেনো লুকিয়ে রেখেছেন নিজেকে। আমার নিজের ও পছন্দের শিক্ষক হলেন জুয়েল ভাই। কিন্তু আমি উনার কোনো অফলাইন ক্লাস করিনি।