ট্রেনে করে ঢাকা যাইতেছি। উদ্দেশ্য কালকে গ্রীণ লাইফ মেডিকেলে সওগাত এহসান ভাইয়ার একটা ওয়ার্কশপ এটেন্ড করা।
এসি বগি। ঙ এর ২০ নাম্বার সিট।
ট্রেনে ওঠে দেখি আমার ঙ এর ২০ নাম্বার সিটে একজন বেঘোরে ঘুমাইতেছে।
ডাকলাম।
ক্সিউজ মি, ভাইয়া।
শুনেনা।
আবার ডাকলাম।
ভাইয়া।
নড়েও না। চড়েও না।
ধাক্কায়ে ডেকে তুলবো নাকি ভাবতেছি। হাত দিয়েও সরায়ে নিয়ে আসলাম-ওই লোক কি না কি ভাবে এই মনে করে।
এমন সময় ২১ নাম্বার সিটের ভদ্রলোক ঘুম ভেঙ্গে তাকাইলেন। বললেন, এটা আপনার সিট? আমি বললাম যে এটা না, পাশেরটা। ২০ নাম্বার আমার সিট।
আপনি বসেন এখানে। উনি ঘুমাক। বলে উনি উঠে গেলেন। আমার পায়ের নিচে একটা বাজারের ব্যাগ দেখলাম। আমাদের বাসায় ও এরকম কয়েকটা বাজারের ব্যাগ আছে। আব্বা বাজারে যাওয়ার সময় আম্মা এগুলা ধরায়ে দেয়। আর হুন্ডার মধ্যে সবসময় থাকে কয়েকটা।
পায়ের নিচের বাজারের ব্যাগ থেকে পানি গড়াইতেছে। দেখেই মেজাজ খারাপ হয়ে গেল। মনে মনে ইয়াক করে উঠলাম।নির্ঘাত গরুর মাংস। একটু পরেই বিচ্ছিরি গন্ধ বের হবে। নাক বন্ধ বলে পাইতেছিনা। একটু পরে নাক খুললেই গন্ধের জ্বালায় টিকা যাবেনা। পরেই মনে হইলো না গরুর মাংস না। এখন তো আর ঈদের সিজন না। ফ্রীজে রাখা মাছ এইটা। পা দিয়ে লাথ্থায়ে আমার নিচ থেকে সরায়ে দেয়ার চেষ্টা করলাম। তখন খেয়াল হলো। মাছও না, মাংসও না। মিষ্টি ।মাতৃভান্ডারের রসমালাই এর বাক্সের মতোন। গোল। বেচারা কোথায় যাইতেছে মিষ্টি নিয়ে, আর আমি শালা ওই মিষ্টির প্যাকেটে জুতা দিয়ে ঠুকরায়ে সরায়ে দিতেছি।ট্রেন থেকে নেমে বাসায় ঢুকার আগে ব্যাটা দেখবে তার সাধের মিষ্টির প্যাকেটে জুতার ময়লা দাগ।শালা শুয়োর বলে আমারে গালি দিবে একটা হয়তো। কিংবা দিবেনা। আমার দাদার মতোন সহজ সরল মানুষ হয়তো উনি।কাউরে কিছু বলেন না। কারোর সাতেও নাই পাঁচেও নাই।
একটু পরে এসে মিষ্টির ব্যাগ নিয়ে চলে গেলেন ওই লোক। আমি ভাবতেছি এই প্যাকেটে কোথাকার মিষ্টি? কুমিল্লার আগে আছে ফেনী, লক্ষীপুর, লাকসাম। কিংবা তারও আগে সীতাকুণ্ড, চট্টগ্রাম।মিষ্টি বিখ্যাত কুমিল্লার। আর কোথাও কি ভালো কোন বিখ্যাত মিষ্টি পাওয়া যায়?
কেজানে যায় যায়তো।
ও হ্যাঁ যায়তো। ফৌজদারহাটের মিষ্টি। এটা অবশ্য বিক্রি হয়না। ফ্রীতে দেয়। ১২ বছর আগের কথা বলতেছি। ২০০৭ সাল। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমল।ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজে বুধবার রাতের খাবারের পরে দিতো।
এখন দেয় কিনা কেজানে। দেয় হয়তো।এই মিষ্টি খাওয়ার লোভে অনেক সময় বারী ভাইয়ের সাথে পায়েস এক্সচেন্জ করতাম। বারী ভাই। আফসানের গাইড। কবির ভাই এর জুনিয়র। কবির ভাই নামাজী মানুষ। আমাকে আদর করতো অনেক। একবার অবশ্য রাগ করছিলেন খুব। আমি রউফ এর গালে চুমা দিছিলাম। কিজন্যে মনে নাই। কি একটা নিয়ে কার সাথে বেট ধরছিলাম সম্ভবত।বড় ভালো ছেলে ছিল রউফ। একবার কি নিয়ে কথা কাটাকাটি হইলো ওর সাথে। শালা আমারে বেল্ট দিয়ে বাড়ি দিল দুইটা। আমি অবাক হয়া গেলাম।চইলা আসলাম।পরে অবশ্য ওই ভেজাল মিটমাট হয়ে গেছিল তখনই। আমি ভুলেও গেছি।
ইন্টারে পড়ি সম্ভবত। সবার নাম্বার কালেক্ট করে কল দিতেছি এক এক করে। রউফরেও দিলাম। কথায় কথায় ও বললো এই কথা। তোরে মারছিলাম। রাগ করছিলি ?
পুরা ট্রেনে পাদ দেয়ার মতন যায়গাটাও নাই। এক্কেবারে ঘিন্জি অবস্থা।এসি বগিতেও সেম অবস্থা।অথচ কয়েক বছর আগেও এমন ছিলনা। আব্বা আম্মা আর আমি যাইতেছিলাম চিটাগাং। রাতের ট্রেন। বিকালে রওনা দিছিলাম। সময়টা ঠিক মনে নাই। আম্মা চিকেন ফ্রাই বানায়া নিছিলো ট্রেনে খাওয়ার জন্যে। ট্রেনে আমাদের সাথে পরিচয় হইলো পুলিশের একজন বড় অফিসারের সাথে। আব্বা উনাকে ফ্রাই খাইতে সাধছিলেন। আমি ভাবছিলাম খাবেনা। ভদ্রলোক খাইছিলেন। তার সাথে তার বউ ছিল। কই তখন তো এত ভিড় ছিলোনা। এসিতো তো না ই। আমি এসি তে চড়তে চাইতাম না। চিপস ওয়ালারা এসি বগিতে আসেনা। ট্রেনে চড়লেই আমার চিপস খাইতে ইচ্ছা হইতো। ট্রেনের বারগার আর স্যান্ডওইচও ভালো লাগতো। একেকটা ৫০ না ৬০ টাকা ছিল তখন। আব্বা কিনে দিতো। আমাকে খাইতে দেয়ার আগে আম্মা এক কামড় খেয়ে দেখতো ভাল নাকি। একবার সিলেট গেলাম আব্বার সাথে। আমি আর আব্বা। আম্মা যায়নাই ওইবার। হোটেল গুলশানে থাকতাম আমরা তখন। তালতলায়।আব্বা থাকতে চাইতো হোটেল শাহবানে। অনেক আগে থেকেই সিলেটে আসলে আব্বা হোটেল শাহবানে থাকে।একবার শাহবানে গেলাম, ওখানকার এক লোক, পরিচিত ছিল কিনা কেজানে, বললো গুলশানে থাকতে। তারপর থেকেই গুলশানে থাকি আমরা।পৌঁছানোর পরে রাতেরবেলা ঝালফ্রাই না কি বাল যেন একটা খাইছিলাম গুলশান হোটেলে। বাসায় ফেরার পরথেকেই আমার পাতলা পায়খানা। পাতলা পায়খানা কি ঝালফ্রাই এর জন্যে নাকি ট্রেনের স্যান্ডউইচ এর জন্যে এটা জানার আর সুযোগ হয়নাই।
চলবে।
Tags: