আপনি কি মেডিকেল স্টুডেন্ট/ ডাক্তার?

মেডিকেল-ডেন্টাল স্টুডেন্ট, ডাক্তার ভাইয়া আপু এবং শ্রদ্ধেয় শিক্ষকবৃন্দ,  সবার দৃষ্টি আকর্ষন করছি।
১৭-৯-১৫ তারিখ রোজ বৃহস্পতিবার দৈনিক প্রথম আলো এর ১১ নাম্বার পৃষ্ঠায় \”মেডিকেল ও ডেন্টালে ভর্তি পরীক্ষা: কিছু প্রস্তাব\” শিরোনামে একটি লেখা ছাপা হয়েছে। লিখেছেন \”জাফরুল্লাহ চৌধুরী: ট্রাস্টি, গনস্বাস্থ্য কেন্দ্র\”।
লেখার কিছু চুম্বক অংশ এবং তা পড়ে একজন মেডিকেল স্টুডেন্ট হিসেবে আমার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছি :

১। মূল লেখা:
\”পর্যাপ্ত চিকিৎসক সৃষ্টির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য এ বছর থেকে ৩৮ টি সরকারি ডেন্টাল ও মেডিকেল কলেজে অতিরিক্ত ১ হাজার ৫০০ আসন বাড়ানো দরকার। শিক্ষকসংখ্যা বাড়াতে না পারলেও ক্লাসরুমে কতক অডিও ভিজুয়্যাল যন্ত্রপাতি স্বল্প খরচে যোগ করলে ভালোভাবে কাজ চলবে।খরচ খুব বেশি নয়। \”

প্রতিক্রিয়া:
আপনি বলতে চাচ্ছেন যে যন্ত্রপাতি বাড়ালেই কাজ চলবে?
একটা মেডিকেল কলেজে যদি ৫ জন করেও বেশি ছাত্র ভর্তি করা লাগে, লেকচার গ্যালারিতে জায়গা দিবেন কিভাবে?
আচ্ছা ধরে নিলাম গ্যালারিতে জায়গা হল, কিন্তু শিক্ষকসংখ্যা না বাড়ালে ক্লাস নিবে কে?
যন্ত্রপাতি ক্লাস নেয়ার একটা উপকরন। এগুলো তখনই কাজে আসবে যখন ক্লাসে শিক্ষক থাকবে। যদি শিক্ষকই না থাকে তাহলে যন্ত্রপাতি দিয়ে হবেটা কি?
পেরিফেরাল মেডিকেল কলেজগুলোতে শিক্ষকসংকট সম্পর্কে লেখকের কোন ধারনা নেই বুঝা যাচ্ছে।
আর মেডিকেল কলেজের লেকচার ক্লাস সম্পর্কেও লেখক সামান্যই জ্ঞান রাখেন বলে আমার ধারনা। প্রজেক্টরে ১৫ টা তথ্যবহুল রঙচঙা পাওয়ারপয়েন্ট প্রেজেন্টেশন দেখালেই ক্লাস নেয়া হয়ে যায়না।

********

২। মূল লেখা:
\”সরকারি ও বেসরকারি প্রায় ১০০ মেডিকেল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আছে। প্রতিটি মেডিকেল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এ বছর থেকে ৫০ জন করে ছাত্রকে ফিজিওথেরাপি ও ফার্মেসি বিভাগে ভর্তি করা হোক। প্রথম শিক্ষাবর্ষে উভয় বিভাগের কিছু কোর্স যথা: এনাটমি, ফিজিওলোজি, ফার্মাকোলজি, বায়োকেমিস্ট্রি ও কমিউনিটি হেলথ এমবিবিএস এর সমতুল্য।\”

প্রতিক্রিয়া:
প্রথম কথা, \”মেডিকেল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বলতে কি বুঝানো হয়েছে?
ধরে নিলাম মেডিকেল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বলতে মেডিকেল কলেজকেই বুঝানো হয়েছে। লেখকের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে, মেডিকেল কলেজে ফিজিওথেরাপি কিংবা ফার্মেসি পড়ানো হয়না।
দ্বিতীয়ত, \”প্রথম শিক্ষাবর্ষে উভয় বিভাগের কিছু কোর্স \” উভয় বিভাগ বলতে বুঝানো হয়েছে কাকে?
লেখকের অবগতির জন্যে বলছি,  প্রথম বর্ষ এমবিবিএস এর বিষয় তিনটা:
এনাটমি, ফিজিওলোজি এবং বায়োকেমিস্ট্রি।
কমিউনিটি হেলথ নামের কোন বিষয় এখানে পড়ানো হয় না। লেখক সম্ভবত \”কমিউনিটি মেডিসিন & পাবলিক হেলথ\” এর কথা বলতে চেয়েছেন, যা তৃতীয় বর্ষে পড়ানো হয়।
এমবিবিএস কোর্সে ফার্মাকোলজি পড়ানো হয় চতুর্থ বর্ষে।

*********

৩। মূল লেখা:
\”ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেবে কেবল অধুমপায়ী শিক্ষার্থীরা।\”

প্রতিক্রিয়া:
একটা ছেলে ধূমপান করে কিনা সেটার সাথে তার মেডিকেল কলেজে পড়ার কি সম্পর্ক?

*********

৪। মূল লেখা:
\”মূল ভর্তি পরীক্ষা হবে সেবার মন মানসিকতা নির্ধারনের নিমিত্তে এবং ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা নিরুপনের জন্য।\”

প্রতিক্রিয়া:
মানে আপনি বলতে চাচ্ছেন, মেডিকেল কলেজে পড়ার যোগ্যতা আছে কিনা সেটা যাচাই করা লাগবেনা?
ইংরেজি ভাষায় দক্ষ আর সেবার ব্রত থাকলেই মেডিকেলে পড়ার সুযোগ দেয়া উচিত?

*********

৫। মূল লেখা:
\”মানসিক স্থিতি, সংস্কৃতি, সাতার, সাইকেল চালানোসহ অনুন্য খেলাধুলায় অংশগ্রহন সম্পর্কিত বিষয়ের জন্য ১৫ নম্বর।\”
প্রতিক্রিয়া:
মানসিক স্থিতি, সংস্কৃতি – এটুকু পর্যন্ত ঠিক আছে।
একটা ছেলে সাতার জানে কিনা, সাইকেল চালাতে পারে কিনা, ডাংগুলি খেলতে পারে কিনা – ডাক্তার হতে গেলে এসব এর প্রয়োজন কোন ক্ষেত্রে বলতে পারেন?

*******

৬। মূল লেখা:
\”সুন্দর হাতের লেখার জন্য ৫ নম্বর।\”

প্রতিক্রিয়া:
একটা ছেলে ডাক্তার হবে। তার হাতের লেখা সুন্দর নাকি অসুন্দর তাতে কি আসে যায়? লেখা সুন্দর হওয়াটা অবশ্যই প্রশংসনীয় কিন্তু তাই বলে কারো লেখা খারাপ বলে সে মেডিকেলে পড়ার সুযোগ পাবে না এমনটা অযৌক্তিক।

**********

৭। মূল লেখা:
\”বর্তমানের মেডিকেল কারিকুলামে জনসাধারনের সংগে, বিশেষত পল্লির দরিদ্র মানুষের সংগে ভবিষ্যতের চিকিতসকদের পরিচিতির পর্যাপ্ত সুযোগ নেই।শিক্ষা কার্যক্রমে কমিউনিটি মেডিসিনের জন্য বিরাদ্দ আছে দুই থেকে চার সপ্তাহ, যা কক্সবাজার ও কুয়াকাটার পিকনিকে ব্যয়িত হয়।\”

প্রতিক্রিয়া:
উপরের লেখাটা পড়ার পর মনে হচ্ছে এমবিবিএস কোর্স সম্পর্কে লেখকের কোন ধারনাই নেই।
এমবিবিএস কোর্সে কমিউনিটি মেডিসিনের জন্যে বরাদ্দকৃত সময় এক বছর। লেখক সম্ভবত কমিউনিটি মেডিসিন বলতে শুধু  RFST [ Residential field Site Training ] আর শিক্ষা সফরকেঈ বুঝেন।

*********

সবশেষে:
লেখার শিরোনাম ছিল \” মেডিকেল ও ডেন্টালে ভর্তি পরীক্ষা:কিছু প্রস্তাব \”
লেখক এখানে তুলনা দেয়ার জন্যে টেনে এনেছেন ফিজিওথেরাপি, ফার্মেসি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে।
লিওনেল মেসির সাথে রজার ফেদেরারের তুলনা করাটা কি যৌক্তিক?
আমার বিশ্বাস, সবাই বলবেন,  না।
কেন?
কারন একজন ফুটবল খেলেন, আরেকজন টেনিস।
তেমনি মেডিকেল-ডেন্টাল এর সাথে ফিজিওথেরাপি, ফার্মেসি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিংকে টেনে আনা একেবারেই অযৌক্তিক।

****
ফয়সাল আবদুল্লাহ।
তৃতীয় বর্ষ।
ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ।

[ লেখা পড়ার পর যদি কারো মনে হয় যে আমি ধূমপায়ী, আমার হাতের লেখা বাজে, সাতার পারিনা, সাইকেল চালাতে পারি না, – এজন্যে বিরোধিতা করছি,  তবে তার জন্যে সমবেদনা। ]

Tags:

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top