কিছু বিষাদ হোক পাখি : ১

\”ভেঙে সে আগেও পড়েছে। বেশিদিন আগের কথা না। ১৯ জুন ২০১১। ঠিক যেন ওই এডটার মত।
ছেলের ৯৯% ই ভালো, শুধু মাঝে মাঝে নাইট ক্লাবে যায় আর কি।
দিনের ৯৯% ই ভালো, শুধু সকাল বেলাটা একটু খাপছাড়া খাপছাড়া ছিলো।
স্রষ্টা কখনো অবিচার করেন না-এই বিশ্বাসটা ছিল ছোটবেলা থেকেই।অটুট ছিল ১৯ তারিখ, সকাল ৬টা ৫ পর্যন্ত।
৬টা ৪ মিনিট পর্যন্ত ঘুমাচ্ছিল সে।
\”……… আমি পুরা পাতা পড়ে দেখসি।না নাই।ওয়েটিং লিস্ট এ ও নাই।……. \” ঝাপসা ভাবে কানে বাজছিল কথাগুলো।
\”…… আরে বাদ দাও।আরো তো কত কলেজ আছে, এখানে হয় নাই তো কি হইসে?\”

মায়ের এই কথাগুলো শুনে ঘুমে অসার হয়ে যাওয়া দেহটা প্রাণ ফিরে ফেল, নিউরণের যাতনায় চোখ খুললো সে।খালি গায়ে কখনোই বিছানা ছাড়ে না , কিন্তু নিউরনগুলো এত র‍্যাপিডলি অনুরণিত হচ্ছিলো যে এর ফলে সৃষ্ট উত্তেজনা আজীবনের অভ্যাসকে বুড়ো আংগুল দেখানোর জন্যে যথেষ্ঠই ছিল।শীতের সকাল-পায়ে জুতা ছাড়া ফ্লোর এ পা দেয়-কার এমন দু:সাহস!শীতকে উপেক্ষা করে চেয়ারে বসে থাকা মায়ের দিকে ছুটলো সে।স্কুলের ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় কখনোই দৌড়ায়নি, ফুটবলও খেলতো না,ক্রিকেট তো নয়ই- ততটা ভালো দৌড়ানোর কথা না। কিন্তু কি যেন একটা সে দেখলো টেবিলের উপর যেটা তার ভেতর এক অনির্বচনীয় ইচ্ছাশক্তির জন্ম দেয় সে মুহূর্তে।
\”শক্তি সৃষ্টি হয়না \”- ক্ষনিকের জন্য শক্তির এই অবিনশ্বরতাবাদ থমকে গেল।অদম্য এক ইচ্ছাশক্তি তৈরি হল তার ভেতর।কালক্ষেপণ না করেই গতিশক্তিতে পাল্টে নিল সেটা নিজেকে। ছিনিয়ে নিল পত্রিকাটা মায়ের হাতে থেকে।এই ছিনিয়ে নেয়ার প্রাবল্য হার মানালো টেবিলের উপর পড়ে থাকা চশমা আর টেবিলের মধ্যকার ঘর্ষণ বলকে। নতুন কেনা চশমাটার গ্লাসের অণুগুলো তাদের মধ্যকার রাসায়নিক বন্ধনের মায়া ত্যাগ করে মাটিতে পড়ে গুড়ো হয়ে গেল।

অগোচরেই রয়ে গেল এই বন্ধন বিচ্ছেদ।৭০০ কোটি মানুষের এই গ্রহের কোন একটা জীবও সাক্ষী হল না এই বিচ্ছেদের। \”টপটপ করে পানি পড়া\”- এই ব্যাপারটা কেবল বাংলা সিনেমায় ঘটে বলেই জানতো এতদিন। কেবল শাকিব খানের চোখই টপটপ করে পানি বর্ষণ করে- এই বিশ্বাস ভেংগে গেল মুহূর্তেই। রেটিনায় এমন একটা বিম্ব গঠিত হল যেটার উল্টা বিম্ব ক্ষণিকের জন্য বাংলা সিনেমার নায়কে পরিণত করলো তাকে।

বৃষ্টি ছিল না সেদিন, বাসায় ছাদের পানিও পড়ত না।কিন্তু কোথা থেকে যেন এক ফোটা নোনা পানি এসে ফ্লোরটাকে ভিজিয়ে দিল। একফোটা পানি পড়ার এই আওয়াজ দেয়ালে বসে থাকা এই টিকটিকির কানেও পৌছেছিল কিনা সন্দেহ। কিন্তু স্রষ্টার কানে বোধহয় পৌছেছিল। স্রষ্টা কত জোরে শুনেছিলেন এই আওয়াজটাকে -এটা সম্পর্কে আমি কিংবা নায়ক কেউই অবগত নই।কিন্তু এই এক ফোটা নোনা পানির মূল্য বোধ হয় একটু বেশিই ছিল।
১,৩,৪,৫,৮,৯,১০,১১,২১—- কোন সমস্যাই ছিল না যদি ধারাটা এমন হত।এই ধারা থেকে কে যেন নায়কের আইডল চমক ভাইয়ার সবচেয়ে প্রিয় সংখ্যা ১১ কে জোর করে হটিয়ে দিয়েছে। চোখ দুটো এবার ওয়েটিং লিস্ট খুজছিল। খুজে পেল ঠিকই। কিন্তু কেন যেন স্রষ্টা তাকে আর ওয়েট করাতেও চাইলেন না। কোন এক অজানা কারণে স্রষ্টা তাকে নটর ডেম কলেজের ছাত্ররূপে দেখতে চাইলেন না।ওয়েটিং লিস্ট টা আরেকবার হাতড়ে বেড়াল নায়কের চোখ…… আরো একবার….. in vain.
……
……
……

বাংলা সিনেমার প্রেমের কাহিনি মিথ্যে হলেও চোখ থেকে টপটপ পানি পড়ার ঘটনা যে প্রায়শই ঘটে- ১৯ জুনের পরবর্তী ১১ দিনে এই বিশ্বাসটা মনে গেথে গিয়েছিল সত্যের মত।\”

পিচ্চিটা বলছিল মাছ একে দিতে।
একটা প্যাড ধরায়ে দিল হাতে।
খালি পৃষ্ঠা খুজছিলাম, মাছ একে দিবো বলে।পুরো প্যাড জুড়ে পিচ্চির এটাসেটা আকা আকি।
হঠাত নিজের লেখা পেয়ে চমকে ওঠি!

১৫ তারিখ শেষ হয়েছিল আমাদের এসএসসি পরীক্ষা।১১ সালের কথা বলছি।
তখন ঘরে ঘরে  প্রগতিশীলতা আর ডিএসএলআরের চল আসেনি। হ্যাপিনেস ইজ, সেলফি আর হ্যাশট্যাগ তো বহু পরের কথা।
যা বলছিলাম, ১৫ তারিখ শেষ হয়েছিল এসএসসি।কুমিল্লা হাই স্কুলে সিট পড়েছিল। বাসা থেকে ১০/১৫ টাকা রিক্সাভাড়া।
রিটেন শেষ করেই গ্রামের বাড়িতে চলে গিয়েছিলাম।প্র‍্যাকটিক্যাল ওখান থেকেই দিয়েছি।আব্বুর সাথে আসতাম আমি।

২১ তারিখ ঢাকায় যাই।মার্চ মাসের ২১ তারিখ-আমি, আম্মা আর আব্বা।সেবার ট্রেনে করে গিয়েছিলাম। সাথে ছিল সংসার পাতার সরঞ্জাম।
দুজনের সংসার-আমি আর আম্মা।
বাংলাদেশ ব্যাংক কলোনী।
বাড়ি নং গ-১।
দোতলায় থাকতাম আমরা, সাবলেট।
আব্বা আসতো বৃহস্পতিবার, মেহমান হয়ে।

কেমন যেন লাগতো আমার।
স্কুল ফ্রেন্ডরা সবাই তখন কুমিল্লায়।
আজকে এখানে তো কালকে ওখানে ঘুরাঘুরি।
শুনেছি এসএসসির পরের সময়টা নাকি জীবনটাকে উপভোগের।
মুনির হাসান স্যার একগাদা মুভি আর বই এর লিস্ট দিয়েছিলেন একটা পোস্টে-এসএসসির বন্ধ কাটানোর জন্যে।
মুভি দেখতাম না আমি তখন।
তবে বই পড়েছি প্রচুর।
উচ্চ মাধ্যমিক গণিত।
উচ্চ মাধ্যমিক পদার্থ।
উচ্চ মাধ্যমিক রসায়ন।
উচ্চ মাধ্যমিক জীববিজ্ঞান।
আমার ব্যস্ততা তখন জীবন গড়ায়। এনডিসিতে চান্স পেতে হবে যে!

১৯ জুন নটরডেম কলেজ ভর্তি পরীক্ষার রেজাল্ট দিল।
আমি চান্স পাইনি।

আব্বা খুব বলতো,বাবা এখন একটু কষ্ট কর।কষ্ট করলে আল্লাহও দেখবে।কষ্টের ফল আল্লাহ নিশ্চয়ই দিবেন।

আমি কষ্ট করিনি, একদমই করিনি।

হুহ!
আজকে প্যাডটা হাতে পেয়ে হঠাত পুরনো কথাগুলো মনে পড়লো।
:\’-)

No one deserves.
Everything has to be earned.

খুব কাঠখোট্টা হয়ে গেল।
ধ্যাত্তেরি।
আমি বরং গান শুনি।মেঘদলের গান:

এখানেই শুরু হোক রোজকার রূপকথা।

:\’-)

Happy Blogging!
FA

Tags:

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top