সে অনেক কাল বর্তমানের কথা : ১

আব্বার সাথে একান্তে সময় কাটানোটা সবসময়ই আমার জন্যে ভীতিকর, বিশেষত যখন আব্বার মেজাজ চড়া থাকে।
এমনিতেই আব্বার সাথে \’আদর্শগত\’ দ্বন্দ্ব আছে আমার।তার উপর ইন্টার থেকে আব্বার সাথে তেমন সময় কাটানো হয় না, তাই ভয়টা কাটেনি বরং ফুলে ফেপে পটেনশিয়ালের মত জমেছে।
আসার পর থেকেই আব্বা চেতা আমার উপর।
আজকে আম্মা পিচ্চিপাচ্চা নিয়ে গ্রামে গেল।বাসায় আমি আর আব্বা একা।
বুঝলাম কপালে শনি আছে।

আমি কাশি দিলাম।
আব্বা: তোমারে আমি কতবার বলসি যে একটু সচেতন হও।এইভাবে আর কয়দিন চলবা।
বললাম আমার সাথে হাটতে চল, তুমি যাবা না।এভাবে আজাইরা থেকে তো একটা মানুষের জীবন চলতে পারে না।
[ ব্লা ব্লা ব্লা ব্লা ব্লা ]

আমি ইনহেলার নিলাম।
আব্বা: তুমি তো এজমাতেই মারা যাবা।তোমার ডাক্তার হয়ে তো কোন লাভ নাই। তুমি তো নিজেই অসুস্থ।
তোমারে বললাম একটু কায়িক পরিশ্রম কর। সাইকেল পাঠাইলাম ফরিদপুরে।তুমি চালাও না মাসে একবারও।আরে বিকালবেলা একটু বাইর হও। নাহয় এই কয়টাদিন আমার সাথে হাটো।
[ ব্লা ব্লা ব্লা ব্লা ব্লা ]

তুমি শেভ কর না কেন?
তোমার কাছে তো রোগী আসবে না।
ডাক্তার হইতেসো, তোমার শেভ করার কথা কি আমার মনে করায় দিতে হবে?
[ ব্লা ব্লা ব্লা ব্লা ব্লা ]

প্যান্ট হ্যাচড়ায় কেন?
হাটার সময় শব্দ হয় কেন?
হেডোফোন দিয়ে গান শুনো কেন?  স্পীকারে শোনা যায় না?

পড়ালেখা কর না কেন? তোমারে তো পড়তেই দেখি না। কোন একবারও তো ফরিদপুর যেয়ে তোমাকে।পড়তে দেখলাম না।এই পড়া দিয়ে তো ডাক্তারি হবে না।
[ ব্লা ব্লা ব্লা ব্লা ব্লা ]

দুপুরের ঘটনা।অফিস থেকে একটা স্টেথো আর একটা বিপি মেশিন আনসে আব্বা।এনে বললো প্রেসার মাপতে।
ম্যানোমিটার টাকে হার্ট লেভেলে রাখলাম। আব্বা জিজ্ঞেস করে, এইটারে এখানে রাখার দরকার কি?
আমি: জানি না।
আব্বা: কেমনে জানবা, পড়ালেখা তো কর না। এই প্রশ্নটা মাথায় আসে নাই পড়ার সময়?
আমি: আসছিল।
আব্বা: কাউকে জিজ্ঞেস করসো?
আমি: না।
আব্বা: তা কেন করবা।এইটা জিজ্ঞেস করলে তো তোমার ভাংগা কলসির খোজ পাইয়া যাবে সবাই।
[ ব্লা ব্লা ব্লা ব্লা ব্লা ]

মাপলাম প্রেসার।

বাপের দেখাদেখি মাও আসলো, আন্টিও আসলো।সবার প্রেসার মাপা হল একদফা।
এরপর আসলো পিচ্চি।
আমার ছোট ভাই।
চাচাতো ভাই।
বয়স ২ বছর।
এর প্রেসার মাপতে হবে।
আমি বললাম এরটা মাপা যাবেনা।এ ছোট।
আব্বা জিজ্ঞেস করলো, কত বছর বয়স হইলে এই মেথডে প্রেসার মাপা যায়?
আমি বললাম, জানি না।
আব্বা: প্রেসার পড়ায় নাই?
আমি: পড়াইসে।তয় এইটা পড়ায় নাই।
আব্বা: সবকিছু কি পড়ায় দিবে নাকি।কিছু জিনিস নিজের পড়তে হয়। তুমি তো কিছুই পারো না।পড়ই তো না, পারবা কেমনে। কি ডাক্তারি করবা।
[ ব্লা ব্লা ব্লা ব্লা ব্লা ]

একটা সমস্যা ফেস করছিলাম কিছুদিন ধরে।
দুই চোখ দিয়েই পানি পরে।

এক বুক সাহস সঞ্চয় করে আব্বাকে বললাম কথাটা।
বাক্যবাণে জর্জরিত হওয়ার পর গেলাম ডাক্তারের কাছে।

সেইরকম ভয় পাচ্ছিলাম।
মেডিকেল স্টুডেন্ট হওয়ার পর এই প্রথম ডাক্তারের কাছে যাচ্ছি।
চোখের ডাক্তার।
আইবল থেকে কিছু জিজ্ঞেস করে বসে কিনা আবার!
এমনিতেই এইটা তেমন পড়া নাই, তার উপর আব্বার সাথে যাচ্ছি।

কি সমস্যা তোমার?
-স্যার,দুই চোখ দিয়ে পানি পরে।
কয়দিন ধরে এই সমস্যা?
-স্যার বেশ কয়েকদিন ধরেই।গত ৫/৭ দিন হবে।
আরে বেশ কয়েকদিন মানে তো ৫/৬ মাস।এক সপ্তাহ চোখ দিয়ে পানি পড়াকে তো বেশ কয়েকদিন বলা যায় না।
আমি আবুল হয়ে বসে রইলাম ]
আর কিছু?
– স্যার দূরের জিনিস দেখতে একটু সমস্যা হয়।

কি সব মেশিনে পরীক্ষা করার পর, তুমি তো চাপা মারসো।তোমার আরো সমস্যা আছে।কি সমস্যা বল।
আমি আবুল হয়ে বসে রইলাম।
তোমার তো ঘাড় ব্যাথা করে।মাথা ব্যাথা করে।চোখ ব্যাথা করে।

আমি মনে মনে ভাবছিলাম,ঘটনা তো সত্যিই।
কিন্তু আমার ঘাড়ব্যাথার ইতিহাস অনেক পুরনো, ইন্টার থেকেই।তাই অতোটা সিরিয়াসলি নেই নাই।

কি! ঘটনা সত্যি কিনা বল!
-জ্বি স্যার।
এগুলা বলতে হবে তো। না বললে কিভাবে হবে।

আরো কিছুক্ষন পর, তুমিতো চোখেও দেখো না।তোমার তো চশমা পড়া উচিত।

এইবার আব্বা মুখ খুললেন, \”স্যার, একে তো আগেও চশমা দেয়া হইসে।এ তো চশমা পড়ে না।\”
না পড়লে তো হবে না। ডাক্তার দেখায়ে ডাক্তারের পরামর্শ মানবা না, তোমার তো এমবিবিএস রেজিস্ট্রেশনই ক্যানসেল করে দেয়া উচিত।

[ ব্লা ব্লা ব্লা ব্লা ব্লা ]
শেষকথা:
আমিও চশমা পেলুম।
আমাকেও এখন দেখতে ডাক্তারের মত লাগবে।
[ বিজয়ের ইমো হবে ]

Tags:

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top