দৃশ্য ১:
রিক্সায়। আমি আর ও।আমরা দুজন।পাশাপাশি।
……………….
……………….
……………….
– এই! তোমার বাসায় কবে নিয়ে যাবা?
– যাবা?
– নিবা?
– আচ্ছা চল আজকেই!
– আম্মু?
– আম্মুকে বলবো, মা তোমার \’হইলেও হইতে পারে \’ পুত্রবধুকে নিয়ে আসছি।
– \’হইলেও হইতে পারে\’ মানে?
– মানে এইযে ধর তোমার আব্বা, মানে আমার হইলেও হইতে পারে শ্বশুরমশাই যদি তোমাকে ধরে বেধে কোন ঢামেক, চমেকের হাতে তুলে দেয়, তাহলে আমি ফমেক কোন ছাড়!
– একদম চুপ!
– এইই, সত্যি যাবা?
– কেন, যেতে চাই যদি?
– আম্মু যখন বাসায় থাকবেনা তখন নিয়ে যাব।
-ধ্যাত, অসভ্য!
– অসভ্যের কি দেখলা! আম্মু তোমাকে দেখলে আমার আর আস্ত থাকা লাগবে না।
-তুমি একটা ভীতুর ডিম।
– আপনি মনে হয় খুব সহসী!
– তোমার মত ভিতুর ডিম না অন্তত।
– বলসে আপনেরে! আমিতো তাও আব্বুকে আপনার সাথে আমার ছবি দেখাইসি। আপনিতো সেটাও করেন নাই।
-আমিও যা বলার বলে রাখসি।
– কি বলসো?
-বলসি, আমাদের এখানে একটা মহা আতেল আছে। নাম ফয়সাল। এমনিতে শান্তশিষ্ট মনে হলেও ভীষন ফাজিল আর দুষ্টু।
– তুমি এইসব বলসো!
– হ্যা! তো এগুলা ছাড়া আর কীইবা বলার আছে তোমার নামে?
ওর চোখেমুখে চাপা হাসি।
– আমি আতেল ?
– হ্যা, সবাই জানে!
– আমি ফাজিল?
– কোন সন্দেহ আছে?
– প্রমান কি?
– আমার মত একটা শান্ত শিষ্ট গুল্টুগুল্টু মেয়ের সাথে গোপনে গোপনে ক্যাম্পাসে কাউকে না জানিয়েই প্রেম করতেসো। তুমি ফাজিল না তো কী!
-আর দুষ্টামি করলাম কবে?
– তুমি যেগুলা লিখে বেড়াও ওগুলা কি কোন ভালো মানুষ লিখে?
……………….
……………….
……………….
দৃশ্য ২:
পুকুরপাড়ে বসে আছি।
এই পুকুরঘাটের অবস্থান ফরিদপুর জেলা জাতীয় পাঠাগারের সাথে।
পাঠাগার, ঈদগাহ আর পুকুর-তিনটা জিনিস একসাথে। অবশ্য পুকুর না বলে এটাকে ছোটখাট দীঘি বলা উচিত।
পুকুরের সাথেই বিশাল একটা বাধানো ঘাট।
গ্রামে বলে ঘাটলা।
এই ঘাটলায় আমি গালে হাত দিয়ে বসে আছি। মেজাজ মোটামোটি খারাপ।
ও এসে আমার পাশে বসলো। আমার এক হাত টেনে জড়ায়ে ধরলো।
-এই যে বাবুতা! রাগ করে না সোনা! রাগ করলে রাতের বেলা পড়তে পারবা না।
-আমি পড়তে না পারলে তোমার কি?
-ওমা! কি বলে! না পড়লে আমাকে বিয়ে করে খাওয়াবা কি?
-তুমি এমন কে হইসো যে তোমার সাথে রাগ করে থাকলে আমার পড়া হবে না?
– আমি আপনার হইলেও হইতে পারি বধু
– \’হইলেও হইতে পার\’ মানে?
-মানে এই যে ধরেন আমার হইলেও হইতে পারে শ্বশুর আব্বাজান যদি আপনার জন্য লক্ষী দেখে একটা বুয়েট ঢাবির কইন্যা ধরে নিয়ে আসল -এই ব্যাপার টা বিবেচনা করলাম আর কি!
……………….
……………….
……………….
ভূমিকা:
আমার নাম ফয়সাল।
ফয়সাল আবদুল্লাহ।আবদুল্লাহর ব আর দ আলাদা হবে।
এই মেয়েটাকে প্রেমিকা বলবো, নাকি গার্ল্ফ্রেন্ড বলবো, নাকি হবু বধু বলবো সেটা আমি জানি না।আমি শুধু জানি, ওকে আমার লাগবে।
সেই ফার্স্ট প্রফের আগের দিনগুলো থেকেই আমরা একসাথে।
এই আমি কক্ষনো ভাবিনি যে আমার একটা কথা বলার মানুষ হবে।
ওকে ভালোলাগতো শুরু থেকে, বলার সাহস হয়নি। কিছুটা ইগো, কিছুটা ভয়- যদি ফিরিয়ে দেয়, আর কিছুটা লোকলজ্জা- লোকে জানলে কি বলবে এসব ভেবে কিছুই করিনি।
প্রফের আগে থেকেই আমরা একসাথে।
কবে কিভাবে কি হল সেটা আমিও জানি না। সত্যি বলছি, আমি শুরু থেকেই ওকে আমার ভাল্লাগতো। প্রথমদিকে কথা একদমই হত না।ফেসবুক হোয়াটস এপে আমার আগ্রহ কোনকালেই ছিল না, আমি কোমলমতি কি না!
কিভাবে কি হয়ে গেল আমি জানি না।
পালায়ে প্রেম করতেসি বলা যায়।
যুগলেরা যখন তখন ঘুরতে যায়, লাইব্রেরীতে একসাথে পড়ে -এসব কিছুই আমাদের ভাগ্যে নেই।
ওর কথা সত্যি।আমি ভীতুর ডিম।
বাসায় জানলে কি হবে, ক্যাম্পাসে জানলে কি হবে – এসব ভাবলেই অস্বস্তি বোধ হয় আমার। তাই ডুবে ডুবে জল খাচ্ছি।
আজকে বের হলাম।
অনেকদিন পর।এমনিতে একসাথে বের হওয়ার সুযোগ পাওয়া যায় না। আজকে ও সুযোগ পেল, আমিও আর আপত্তি করলাম না,যা থাকে কপালে!
রিক্সায় ওঠেই ঝগড়া। এটাকে অবশ্য ঠিক ঝগড়া বলা যায় না!
উপসংহার:
যাওয়ার সময় হয়ে এল।
খারাপ লাগতে শুরু করল একটু একটু করে।
ও সেটা বুঝতে পেরে মাথা রাখলো আমার কাধে। আমার মনে হল আমি বোধ হয় মারা যাচ্ছি।
এই মেয়েটারর স্পর্শে বুকটা যেন কেমন করে ওঠে!
হাত রাখলাম ওর হাতে।
ও চমকে ওঠলো।
ওর চোখের ভাষা পড়তে পারছি আমি।
\”তুমি হাত ধরলা!\”- ওর চোখেমুখে অবিশ্বাসের ছাপ।
\”নাহয় ধরলামই\”- বললাম আমি, চোখে চোখে।
FA
Tags: