মিস করছি একজনকে।
আমার মিস করার বাতিক আছে।
একটা ভাইয়া বলেছিলেন মেডিকেল কলেজে ফাদার ফিগারের বড় অভাব। ফাদার ফিগার আমি পাইনি।
অথচ স্কুল কলেজ সেদিক দিয়ে কতটা ভালো ছিল! ফলো করার মত মানুষের অভাব ছিল না কখনোই।
কলেজে পড়ার সময় একটা মানুষকে ফোন দিতাম প্রায়ই।একটা ভাইয়াকে।
মন খারাপ হলে, পরীক্ষায় খারাপ করলে।
একবার ভাইয়া বলেছিলেন লাইট বন্ধ করে রবীন্দ্র বাজাতে।
মাঝেমাঝে তব দেখা পাই।
সাবলেট থাকতাম তখন।
আমি আর আম্মা।
বাংলাদেশ ব্যাংক কলোনী।
তিন রুমের বাসা।
তিন রুমে তিন ফ্যামিলি।
একটা কিচেন,একটা টয়লেট, একটা বাথরুম।
আম্মাকে বললাম বাইরে যেতে।
আম্মা রান্নাঘরে গেল।
আমি প্রায়সময় এমন করতাম।
আম্মাকে রান্নাঘরে পাঠায়ে দিতাম।
আম্মা একা একা যেয়ে বসে থাকতো রান্নাঘরে।
গান ছাড়লাম।
মাঝে মাঝে তব দেখা পাই।
আজকে হঠাত মনে হল ফোন দিই ভাইয়াকে।
সেদিন ফোন দিয়েছিলাম উনাকে।
-হ্যালো, স্লামায়কুম ভাইয়া। আমি ফয়সাল।
\”ফয়সাল….? কোন ফয়সাল\”?
-ফয়সাল আবদুল্লাহ, ভাইয়া।
…………..
ভাইয়া অনেক ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন।ভাইয়াকে জ্বালাতে আর ইচ্ছা করলো না।সন্ধ্যা থেকে একনাগাড়ে গান শুনলাম।
তিনদিন আগে থেকে কিছু একটা লিখার জন্যে মন কেমন কেমন করছে।
গতকাল রাতের ঘটনা।
মন খুউব কেমন কেমন করছিল।
ডাটা কানেকশন অফ করলাম।
ল্যাপটপও বন্ধ করলাম।
এক কাপ কফি নিয়ে পড়তে বসলাম।
আধা ঘন্টার জন্যে।
জাস্ট পড়ায় ফোকাস করলাম।
আধা ঘন্টার জন্যে পৃথিবীর বাকি সবকিছু ভুলে গেলাম।
আধা ঘন্টা পর সব মন খারাপ করা কথা মনে করতে থাকলাম।
বাসায় যাই না কতদিন।
ফরিদপুর চোষে। Faridpur Sucks.
মন খারাপ করা গান সব শুনলাম।
ইদানীং এই কাজটা করছি খুব।
মন নিয়ে খেলা।
সন্ধানীর ম্যাগাজিনে একটা লেখা দিয়েছিলাম।
এই লেখাটা খুব যত্ন করে লিখা।
সেদিন ম্যাগাজিন হাতে পেয়ে লেখাটা পড়লাম।মনে হল ছুড়ে ফেলে দিই। এসব কি লিখেছি!
\”তুমি কাকে ভেবে লিখো?\”
এইটা পড়ে জিজ্ঞেস করেছিল এক ফ্রেন্ড।
-চেহারা ফুটে ওঠে না কখনো।
গোলাপী-সাদা শাড়িতে দেখি সবসময়।
\”আর কিছু?\”
-চুল সামনে এসে পড়ে।
জীবনের একটা পর্যায়ে এসে মনে হয় একটা মানুষ দরকার,যার সাথে অন্তত কথা বলা যায়।
কথা বলা যায় এমন মানুষের অভাব আমার কখনোই ছিল না।
শুধু স্রোতার অভাব ছিল।
ভাইয়া বলেছিলেন মেডিকেল কলেজে ফাদার ফিগারের বড় অভাব। ফাদার ফিগার আমি পাইনি।
আমি আমার সব কথা শোনার জন্যে একটা মানুষ তৈরি করে নিয়েছিলাম।
গোলাপী সাদা শাড়ি পরে সে রোজ আসতো।
আমরা পাশাপাশি বসতাম।
ও পা ঝুলিয়ে বসতো।
খালি পা।
একটা বটগাছের নিচে বসতাম আমরা।
সময় মোটামোটি মধ্যরাত।
কখনো কখনো বিকেলবেলা।
আমি ওর কাধে মাথা রাখতাম।
এক নাগাড়ে কথা বলে যেতাম আমি।
ও শুনতো।মাথা নাড়তো।
কথা বলতে বলতে ঘুমিয়ে পড়তাম আমি।
একটা জিনিস খেয়াল করলাম।
ওই গোলাপি সাদা শাড়ি পরিহিত চুল সামনে এসে পড়া নারীর সাথে দেখা হয় না অনেকদিন।
সপ্তাখানেক তো হবেই।
উনার বসবাস আমার কল্পনায়।
বিছানায় যাওয়ার পর ঘুম আসি আসি করছে এমন সময়টাতে উনি আসতেন।
সপ্তাখানেক ধরে উনার দেখা নেই।
গানের এই লাইনটার সাথে মিলে যাচ্ছে!
\”মাঝে মাঝে তব দেখা পাই,
চিরদিন কেন পাই না? \”
পুজার প্রোগ্রাম চলছিল।
স্বরস্বতী পুজা।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলছিল গ্যালারি ২ তে।
হঠাত মনে হল একটা স্ট্যাটাস দেয়া লাগে।
এই মুহুর্তে একটা স্ট্যাটাস না দিলে জীবন ব্যর্থ।
স্ট্যাটাস দিলাম।
লোকে এই স্ট্যাটাসের মর্ম বুঝলো না।
ওহে কি করিলে বল পাইবো তোমারে রাখিব আখিতে আখিতে?
প্রশ্নটা রবিবাবুর।
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর।
উত্তরও দিয়েছেন রবিবাবু নিজেই।
তুমি আপনি না এলে কে পারে হৃদয়ে রাখিতে?
:\’-)
মিস করছি উনাকে।
আমার মিস করার বাতিক আছে।
FA
Tags: