পাগলের সুখ মনে মনে : ৬

শীতের রাত।
কাপাকাপি পর্যায়ের শীত এখানে।
১২ ডিগ্রির কাছাকাছি চলে যায় কখনো কখনো।
বাড়ি যাই না তিন মাস।
সামনে আপাতত কোন পরীক্ষা নাই।
লেকচার নাই।
পড়ালেখাও নাই।

ভাল্লাগেনা।

সকালে কলেজে যাই।
ডিসেকশনে বসে থাকি।ক্লাবে যাই।
খাই দাই, চলে আসি।
বাসায় এসে ঘুমাই।

উঠে পড়ার টেবিলে আসি।গান বাজাই।লিখি।আকি।ঝিমাই।
গতকাল রাতের কথা।
৭ টা মত বাজে।
ভাল্লাগছিল না।
ব্যাগে কলম আর একগাদা খাতা নিলাম।
কলেজ যাবো।
হাটবো।
একা একা।
খালি রাস্তায়।
হাটতে হাটতে স্টেশন গেলাম।
ফরিদপুর রেলওয়ে স্টেশন।
নতুন বানানো।  নোংরা হয়নি এখনো।প্ল্যাটফর্ম ধরে হাটলাম।
ইশশ!  যদি একটা ট্রেন আসতো এখন। উঠে যেতাম।
চলে যেতাম কোথাও!
রাজশাহী খুলনা বগুড়া।
যেখানে কেউ চিনবেনা সামায়।
রাস্তায় হাটতে গেলে যেখানে পরিচিত কারো সাথে দেখা হবে না।

ট্রেনে চড়ি না অনেকদিন।
ইন্টারে পড়ার সময় শেষবার ট্রেন চড়েছিলাম।
ট্রেনের চা খাইনা অনেকদিন।
ট্রেনের শব্দ শোনা হয়না অনেকদিন।
পোওওও ঝিকঝিক ঝিকঝিক।
অথচ ফৌজদারহাটে থাকার সময় ট্রেনের হুইসেলের জ্বালায় অতীষ্ঠ ছিলাম।
বেশীদিন সইতে হয়নি ট্রেনের হুইসেলের যন্ত্রনা।
আট মাস।
মাত্র আট মাস।
Eight Months Only.
এরপরই চলে আসি।
চলে আসিনি, নিয়ে এসেছিল আমাকে।
আমি আসতে চাইনি।
সত্যি, আমি আসতে চাইনি।

এসব কথা আরেকদিন বলবো।
:\’-)

স্কুলের কথা বলি।
ক্লাস টু তে আমার একটা প্রিয় কবিতা ছিল ট্রেন।

ঝক ঝকাঝক ট্রেন চলেছে রাত দুপুরে ওই
ট্রেন চলেছে ট্রেন চলেছে ট্রেনের বাড়ি কই?

বাচ্চাকালের বইগুলো কী সুন্দর ছিল!
বইয়ে ছবি আকা থাকতো।
ওই ছবি রং করতাম আমরা।
ট্রেন কবিতার সাথে একটা সুন্দর ছবি ছিল। গাছপালা লতাপাতা মিলিয়ে মনকাড়া ছবি।সাথে ট্রেন।বাক নিচ্ছে এমন সময়কার ছবি।
আরে!
ট্রেনের ছবি যেখানে আকা সেখানেই দেখি বাক নেয়ার সময়কার ছবি!
মজা তো!

ট্রেন কবিতার ওই ছবি নিয়ে বিশাল ঝগড়া বাধাইসিলাম একজনের সাথে।
একজনটা আমার খালা।
ছোট খালা।
তাকে  খালা বললে রেগে যেত খুব।
তুই করে ডাকতাম।
ও রং করে ফেলসিল ওই ছবিটা।
আমি চিল্লায়ে বাড়ি মাথায় তুললাম।
\”তাই বেড়াইতে আইসা আমার বই নষ্ট করসে।এখন আমি এইটা পইড়াম কেমনে।\”
এইসব হাবিজাবি।
আম্মার কাছে গেছি বিচার নিয়ে।আম্মা দিল উল্টা চিল্লানি।
\”ফাযিল পোলা, তুই এইটা পড়বি?লেখার উপরে তো রং করে নাই।\”
উচ্চ আদালতে গেলাম।
আব্বারে বললাম। আব্বা বলে, \”থাক ওরে মাইরা দিব।\”

বাচ্চাকালের সান্ত্বনাগুলো কত সুন্দর ছিল!
\”থাক ওরে মাইরা দিব \”।
বাচ্চাকালের সবকিছুই সুন্দর ছিল আসলে।
ছোট্টছোট্ট অভিমান।
নতুন পেন্সিলবক্স না কিনে দিলে স্কুলে যাব না।
ন\’টা না বাজতেই বক্স নিয়ে হাজির আব্বা।

ট্রেন কবিতার কথা বলছিলাম।
পরে খালা ওই বই কিনে পাঠিয়েছিলেন।

আমি আসতে চাইনি ক্যাডেট কলেজ ছেড়ে। সেদিন আমার খুব কষ্ট হচ্ছিল।
খুব কেদেছিলাম।
যেদিন আব্বা বলেছিলেন আমি আর যাব না ফৌজদারহাট।

\"image\"

ক্যাডেট ফয়সাল।
ক্যাডেট নং ২৭৪৬
নজরুল হাউজ।
ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজ।

আফসোস!
খুব শখের, খুব ভালোবাসার-ভালোলাগার জিনিসগুলো কেন যেন আমার পুরন হয় না। নাহয় বেশীদিন টিকে না।
ক্যাডেট কলেজ ছেড়ে চলে আসলাম।
বুয়েটে পরীক্ষা দিলাম না।
শাহজাহান স্যার চলে গেলেন।
চন্দনা ম্যামও।

ধ্যাত।
চা পেলে ভালো হত।
প্ল্যাটফর্ম এ হাটতে থাকলাম।
এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত।
বসে পড়লাম হঠত।
এম্বিগ্রাম করবো।

চা পেলে ভালো হত।
চিনি একটু বেশি।
চা ছাড়া এম্বিগ্রাম হয় না।

ভাবছি সিগারেট খাবো।হায়াত মউত আল্লাহর হাতে। সিগারেট  হায়াত বাড়াবেও না, কমাবেও না।
লোকে খারাপ বলবে?
বলুক!
If no one hates you, you are probably doing something wrong.

রেললাইনের আলোতে জন্ম হল এম্বিগ্রামের।
রাফ কপি।
মাথায় রইলো রাফ কপিটা।

Tags:

0 thoughts on “পাগলের সুখ মনে মনে : ৬”

  1. চন্দনা ম্যাম সম্ভবত শেবাচিমেও ছিলেন কিছুদিন। আমি চিনিনা যদিও। শুনছিলাম উনি ফরিদপুর চলে গেছেন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top