পাগলের সুখ মনে মনে : ৫

একটু আগে ফিজিও রেনাল কার্ডের রেজাল্ট দিল।হাসলাম খুব, রেজাল্ট  দেখে।
পরে কিছুক্ষন গান শুনলাম।পুরনো দিনের গান।সবাই তো সুখি হতে চায়-
\”আমিও আমার মত ভালোবেসে যাব
হয় কিছু পাব নয় সবই হারাবো।
এই চেয়ে থাকা আর প্রানে সয় না।\”

ইগো প্রব্লেম খুব খারাপ একটা জিনিস। আমার মারাত্মক রকমের ইগো প্রব্লেম আছে। কি অদ্ভুত!- কখনো সুপিরিয়রিটি কমপ্লেক্সে আবার কখনো ইনিফিরিয়রিটি কমপ্লেক্সে ভুগি।
কখনো মনে হয় ধ্যাত আমি কী, কোথা থেকে উঠে আসছি, যত্তোসব।
আবার কখনো মনে হয় আরে আমিই বস।

আজকে নিজেকে খুব স্বস্তা মনে হচ্ছে।

স্কুলে আমার অসম্ভব প্রিয় একজন স্যার ছিলেন। গোলাম মোস্তফা স্যার। স্যারের প্রতি আমার অসম্ভব ভক্তি কাজ করে এখনো।
ক্লাস টেনের ঘটনা।
স্যার এক্সট্রা অংকের লিস্ট দিয়েছেন। বইয়ের বাইরে থেকে যে অংকগুলো করতে হবে তার লিস্ট।
স্যার, এটা কি আমার অন্যান্য বন্ধুদের দিব?
\”হ্যা অবশ্যই, কেউ চাইলে তাকে অবশ্যই দিবে।কিন্তু কেউ না চাইলে নিজ থেকে তাকে দিতে যাবে না।মনে রাখবে,
বিনা পয়সার উপদেশ মাঠে মারা যায়।\”

ছোট ছিলাম তো, স্যারের এই কথাটার মানে বুঝি নি।

\”বিনা পয়সার উপদেশ মাঠে মারা যায়।\”

আর বিনা পয়সার উপদেশ দিচ্ছি না।
কাউকেই না।খুব স্বস্তা হয়ে গেছি!

গান শুনি।ওরে নীল দরিয়া-
\”হইয়া আমি দেশান্তরী,
দেশ বিদেশে ভিরাই তরী।\”

ডাক্তারি ব্যাপারটা কখনো আমাকে টানে নি।
জানো, আমার না খুব কষ্ট হচ্ছিল।
আচ্ছা, আমিও তো ফয়সাল।আমি ফয়সাল যদি রেশমার হবু বর ফয়সাল হতাম, তবে কী হত?
আচ্ছা আমি কি রেশমাকে গ্রহন করতাম?

কখনো সার্জন হতে পারবোনা আমি ,প্রিক্রিং-ট্রিকিং ভয় লাগে খুব।থিওরিটিক্যাল ব্যাপারগুলোই আমায় টানে সবসময়।

ধ্যাত, গান শুনি বরং।ছ্যাক খাওয়া গান-

…..ডাকবে না তুমি আমায় জানি কোনদিন।

একটা লেখা পড়লাম প্ল্যাটফর্মের দ্বিতীয় সংখ্যায়।কেন যে এটা পড়ার পর খুব সার্জন হতে চাইলাম।

এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে।লিখতে বসেছি পাগলের সুখ মনে মনে ৬। চলে যাচ্ছি প্ল্যাটফর্মে।

কি অদ্ভুত তাই না?
অনেক লোক জমলেও যুবতী মেয়ে বলে কেউ হাত লাগাতে চায় না।

হায়রে যৌবন!

\”পরের কয়দিন ফয়সালকে আর দেখি না। রেশমার বাপকে জিজ্ঞেস করলে কেদে দিলেন-
\”স্যার ও কিডনি ফেলে দেয়া মেয়েকে বিয়ে করতে পারবেনা\”.

আচ্ছা, আমিতো রেশমার বর ফয়সাল না।আমার এত কষ্ট হচ্ছে কেন?
নাম একই বলে?
নাকি ডাক্তার হব বলে?

আবারো গানে যাই, সোমলতার গান।রঞ্জনা আমি আর আসবোনা মুভির গান-

কান্না হয়ত আসে, তোমারো আমারি মতনই

আমার কখনো মেডিকেলের পড়াকে অসহ্য মনে হয় না। কখনো মনে হয় নি, সত্যি বলছি।কিন্তু, যখন কলেজ বন্ধ থাকে, তখন না আমার খুব খারাপ লাগে।তখন আমি কেবল পালানোর উপায় খুজি।
আচ্ছা, কোথা থেকে পালাতে চাই আমি?
মেডিকেল থেকে?
নাকি ফরিদপুর থেকে?
নাকি জীবন থেকে?

থাক সে কথা।
সেদিন কেন যেন হঠাত প্ল্যাটফর্ম টা হাতে নিলাম।দ্বিতীয় সংখ্যা।
বাস ধাক্কা নিয়ে রেশমাকে রিক্সা থেকে ফেলে দিল।ড্রেনে। সবাই দেখছে তাকে, একটা মেয়ে বাসের ধাক্কায় ড্রেনে গিয়ে পড়লো।প্রচুর ব্লিডিং হচ্ছিলো। পাত্তাই দিচ্ছিলো না কেউ।দিবেই বা কেন?
কে সে?
যুবতী বলে কেউ এগিয়ে আসছে না।
অদ্ভুত লজিক।
স্কুলপড়ুয়া মেয়েটার স্ক্যান্ডাল বের হলে সেটা দেখে মজা নেয়ার সময় কারোরই মনে হয় না যে যুবতী।
মনে হবেই না কেন?

পরে এক বৃদ্ধ রিক্সাওয়ালা তুলে নিয়ে ইমার্জেন্সিতে ফেলে আসে।

একটা কিডনি ফেলে দিতে হয়েছিল।সাথে স্পীনটাও।রেশমার বিয়ে হওয়ার কথা ছিল ফয়সালের সাথে। ফয়সাল কেন কিডনি ফেলে দেয়া মেয়েকে বিয়ে করবে?

একজন স্যার রেশমার কথা লিখেছেন।স্যারের নার্ভ অনেক স্ট্রং বোধ হয়।

আচ্ছা আমি ফয়সাল যদি রেশমার হবু বর ফয়সালের জায়গায় হতাম তবে কী করতাম?

ধুর।
আমি বরং রিক্সাওয়ালা হব।ইন্টার্নীর সময় দুইবেলা রিক্সা চালাবো।কানে হেডফোন দিয়ে।বৃষ্টির গান বাজবে।অঞ্জন দত্তের গান-

\”আমি বৃষ্টি দেখেছি
বৃষ্টির ছবি একেছি…..\”

একটা অদ্ভুত দিন কাটালাম সেদিন।
সকালে রোদ, দুপুরে আরো বেশী রোদ, ঠাটা রোদ, হঠাত বৃষ্টি।
অদ্ভুত, খুব অদ্ভুত!

আম্মা খুব পাড়াপাড়ি করতেসে পড়ার জন্যে।
ফিজিক্স।
কেমিস্ট্রি।
বায়োলজি।
ইন্টারের পড়া আবার পড়তে।
আবার মেডিকেলে পরীক্ষা দিতে।
ভালো মেডিকেলে চান্স পাইতে হবে।
তথাকথিত ভালো, বলে আমি মনে মনে হাসি।

আমাত ভাল্লাগেনা।
কিছুতেই মানাতে পারি না। আবার পড়বো, ইন্টারের বইপত্র। ধ্যাত।
একদিন পড়লাম।এক চ্যাপ্টার। ফিজিক্সের। ফিজিক্স ফার্স্ট পেপারের লাস্ট চ্যাপ্টার। পড়লাম আর হাসলাম।
সকালে উঠে কলেজে গেলাম।
গিয়েই মন খারাপ হয়ে গেল।
এতকিছু ছেড়ে চলে যাবো?
ছোট ক্যাম্পাস।
ছোট ডিসেকশন রুম।
ছোট বলে একটা নিজের নিজের ভাব আছে।খুব আপন মনে হয় ক্যাম্পাসটাকে।

সত্যি, খুব আপন মনে হয়।

আমার খুব কষ্ট হয়।
আমি পারবো না।

Tags:

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top