পাগলের সুখ মনে মনে : ৩

কুমিল্লা জিলা স্কুল।
ক্লাস টেন।মোস্ট সিনিয়র ব্যাচ।
বি সেকশন।

স্কুলের ফার্স্ট বয় ছিল নাহিয়ান।
সেকেন্ড আমি।
থার্ড তাকয়ীম।

তাকয়ীম ততদিনে ঢাকা মেডিকেলে।
নাহিয়ান বুয়েটে, ৮০তম।
আমি তখনো ফরিদপুরেই। আর কোথাও পরীক্ষা দেই নাই।আইবিএর জন্যে একবুক স্বপ্ন নিয়ে বসে আছি।
সারাদিন ভোক্যাব পড়ি। হাই ফ্রিকুয়েন্সি ওয়ার্ড লিস্ট।হট প্রসপেক্টস ওয়ার্ড লিস্ট। ভাবি এরা তো যে যার জায়গায়।আমার কি হবে আইবিএ তে না পাইলে?

গতকালের কথা, তারেক-মুবাশশিরের ধান্দায় পড়ে মাগরিবের নামাজ পড়লাম।কুমিল্লা হাসপাতালের পাশের নতুন মসজিদ। এসি করা।ভেতরে ঢুকেই ভাল্লাগলো। অনেক ভাল্লাগলো। ইচ্ছা করেই আস্তে ধীরে সুন্নত পড়লাম।আরো কিছুক্ষন এসির বাতাস খাই।নামাজ পড়ার সময়ই দেখি থাই এ ব্যাথা।এই ব্যাথার নাম \’ধরা\’। পা ধরসে।
নামাজ পড়ে নামলাম। জুতা হাতে নিয়ে সিড়ি দিয়ে নামছি।নাহ, ধরা কমে নাই। নেমে জুতা পড়তেসি।
তারেক জিজ্ঞেস করলো, তোর জীবনের মোটিভ কি?
আমি হাসলাম খুব, মনে মনে।

সেদিন পুরনো নকিয়া ১০১ এর কন্ট্যাক্ট লিস্টে কিছু ফোন নাম্বার খুজে পাইসি।
Car BMW
Car Audi
Car Mercedes Benz
খুব হাসলাম আমি, মনে মনে। বিএমডাব্লিউ বোধ হয় আর কেনা হবে না।বোধ হয় সেই টিপিক্যাল টয়োটা নিয়েই থাকবো আমি।

তখন স্বপ্ন দেখতাম।আইবিএর স্বপ্ন। একদিন সন্ধ্যায় আম্মাকে বলতেসিলাম, একটা রেস্টুরেন্ট দিব। যেমন তেমন রেস্টুরেন্ট না। এই রেস্টুরেন্টের একটা ক্লাস থাকবে।
Books, Music, Cafe।
বই থাকবে অনেক, যেন লাইব্রেরী একটা।  থাকবে ম্যাগাজিন, পেপার, ট্যাবলয়েড। যার যা ইচ্ছা নিয়ে পড়বে।
আর গান বাজবে।বাংলা গান।
কখনো আবৃত্তি।
উঠতি গায়করা গান জমা দিয়ে যাবে।
সপ্তাহে একদিন লাইভ গান হবে।
আর বিভিন্ন উৎসবে।
পূজা।
ক্রিসমাস।
ঈদ।
আর জাতীয় দিবসগুলোতে।
খাওয়াদাওয়া তো আছেই।

আজকে খুব হাসলাম।
আমার জীবনের মোটিভ!
সত্যিই তো, আমার জীবনের মোটিভ কি?
ডাক্তার হওয়া?
ভালো ডাক্তার?
বড় ডাক্তার?
দেশসেরা ডাক্তার?
আচ্ছা জীবনের কোন পর্যায়ে কি আমি ডাক্তার হতে চেয়েছিলাম? কখনো কি চেয়েছিলাম মেডিকেল কলেজে পড়তে?
যখন ছোট ছিলাম তখন কী হতে চাইতাম?
ডাক্তার?
নাকি
ইঞ্জিনিয়ার?
নাকি অন্য কিছু?
কখনো কি আমার কোন মোটিভ ছিল?

তখন ছোট ছিলাম।অনেক ছোট। যত ছোট হলে মানুষ ডাক্তার আর ফার্মাসিস্ট এর পার্থক্য বুঝে না, তত ছোট।একটা কথা খুব মনে পড়ে আমার।
নানুর বাসার দোতলায় থাকতেন উনারা। উনাকেও আমি নানু ডাকতাম। এখনো মনে আছে আমার, উনার নাম ছিল লিলি।
প্রায়সময় উনাদের বাসায় যেতাম।আম্মার সাথে। উনি আচার খেতে দিতেন। খুব মজা ছিল উনার আচারগুলো। আম্মার বানানো আচারের চেয়ে কয়েক গুন মজা।
তখন আমি আরো ছোট। যতটা ছোট হলে আম্মু কোলে নেয় ততটা ছোট।
\’আমি পুলিশ হমু। সব মাইরালামু\’ -এই কথাটা একবার ওই নানুকে বলসিলাম মনে পড়ে।
আচ্ছা, তখন আমি কি বুঝতাম পুলিশের? তাও তো পুলিশ হতে চাইতাম।
আমরা মানুষেরা আসলে খুব খুব খুব টিপিক্যাল।সবাই সাবকনশাসলি একই জিনিস চাই।

নিজেকে স্মার্ট, এটিপিক্যাল আর one of a kind ভেবে ঠিক ওই কাজগুলোই করি যা ৯৫% লোকে করে।

একটা লাইন আজকে আবার মনে পড়ছে।আমার খুব প্রিয় একটা লাইন-

ভালোবাসা কি জিনিস আমি জানি না, কিন্তু আমি বুকের মধ্যে গোপন ভালোবাসা পুষেছি।

কি অদ্ভূত সুন্দর একটা লাইন!
আর হয়ত অল্প কয়দিন।অল্প কয়েক বছর।
হয়ত ৮ বছর।
হয়ত ১০ বছর।
নাহয় ১৫ ই ধরলাম।
\’তাই বলে ৩৫!\’বলেছিল এক ফ্রেন্ড।
\’আরে কথার কথা!\’এ যাত্রায় বাচলাম।
আর মাত্র কয়েকটা বছর।
তখনই দেখা যাবে কতটুকু ভালোবাসা জমিয়েছি।
আচ্ছা,মানুষ লাভ ম্যারেজ আর এরেঞ্জ ম্যারেজ নিয়ে এতো পাড়াপাড়ি করে কেন?
লাভ ম্যারেজ ভালো।কারন হবু সংগীরা নিজেদের চিনে নেয়ার সুযোগ পায়।
লাভ ম্যারেজ ভালো না, কারন বিয়ের পর আর আকর্ষন থাকে না।
এরেঞ্জ ভালো না।অজানা অচেনা একটা লোকের সাথে কিভাবে সারা জীবন কাটানো যায়!
এরেঞ্জ ই ভালো, বাবা মায়ের ইচ্ছায় বিয়ে করলে আল্লাহর রহমত থাকে।

কত যুক্তি।
কত খন্ডন।
অলস মস্তিষ্ক শয়তানের কারখানা -মিজান স্যার সবসময় বলতেন।এখনো হয়ত বলেন। হয়ত সামনেও বলবেন।

ভালোবেসে ওই মানুষটাকে বিয়ে কর।
নয়ত বিয়ে করে তারপর ভালোবাসো।
ভালোবাসতে হবে, এটাইতো?
ও আমি বেসে নেবো।

Tags:

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top