পাগলের সুখ মনে মনে : ২

আমার কখনো মন খারাপ হয় না। আতেলদের মন খারাপ হতে নেই। সেদিন পুরনো নকিয়া ১০১ টা ঘাটছিলাম।
কিছু পুরনো টেক্সট।
কিছু ড্রাফট।

কিছু কন্টাক্ট।
Car BMW- 028878492
একসময় খুব স্বপ্নবাজ ছিলাম। নেট ঘেটে বি এম ডাব্লিউর ডিলার এর ফোন নাম্বার কালেক্ট করেছিলাম।একদিন কিনবো।তখন যদি ফোন নাম্বার খুজে না পাই?
বড় হচ্ছি, বুড়ো হচ্ছি।
বড় হচ্ছি, মরে যাচ্ছি।
আমার একটা খাতা ছিল।ওই খাতায় আমি হিজিবিজি লিখতাম। সেদিন পুরনো খাতাপত্রের ভীড়ে ওই খাতাটা খুজে পেলাম-

\”ও এখন অন্যদিকে মুখ দিয়ে শুয়ে আছে। ফুঁপিয়ে কান্নার শব্দ পাচ্ছি। বুঝতে পারলাম পাখি ভালোভাবেই কষ্ট পেয়েছে। ভীষন রাগ করেছে ও।রাগ ভাঙাতে কি করতে হবে তাও আমার জানা। আমি জড়িয়ে ধরার মত করে একটা হাত ওর উপর রাখলাম।এক ঝটকায় হাত সরিয়ে দিল ও।এবার আমি উঠে গিয়ে অন্যপাশ দিয়ে শুলাম।ও কিছু বলার আগেই জড়িয়ে ধরলাম।
\’ছাড়ো, ছাড়ো আমাকে। ভাল হবে না বলছি\’ -কাদো কাদো স্বরে বললো সে।

\’না, ছাড়বো না।কিছুতেই না।\’- বললাম আমি।

\’আমার সুন্দরী, রূপসী, গুনবতী, হট, কুল, সেক্সি, সুইট, কিউট এই গুটুগুটু বউটা যখন কেঁদে চোখ ফোলায়, গাল ফুলিয়ে যখন আমার দিকে তাকায় না, অন্যদিকে ফিরে যখন ফুঁপিয়ে কাঁদে তখন আমার কি ইচ্ছে হয় জানো?\’

-\’কী ইচ্ছে হয়?\’

\’ইচ্ছে হয় এভাবে চোখটা মুছে দিই।এভাবে গালটা টেনে দিই।আর,…\’

-\’আর?\’

\’এভাবে কপালে এসে পড়া চুলগুলোকে সরায়ে দিয়ে এই যে এখানে একটা চুমো একে দিই।\’

\’…..ওফ ছাড়।চুমো দিতে হবে না।তুমি ডাক্তারি কর।বড় ডাক্তার হও।\’  \”

ওই খাতার একটা আধছেড়া পৃষ্ঠায় এই কথাগুলো লিখা ছিল।আমি নিজে লিখসি নাকি অন্য কারো লেখা তুলে রেখেছিলাম ঠিক মনে পড়ছে না।
শেষের দুইটা লাইন আজকে লিখলাম।
তুমি ডাক্তারি কর।বড় ডাক্তার হও।

কয়েকদিন ধরে আবহাওয়াটা কেমন কেমন যেন করছে।যেন কিছু একটা বলতে চায়, কিন্তু ভেতর থেকে আসছে না ।ঠিক যেন বমি করার আগের মুহুর্তটা।আসি আসি করেও আসছে না।
সকাল বিকাল বৃষ্টি।
ঝুম বৃষ্টি।
সেই কবে আমার জ্বর উঠেছিল।আমি বোধ হয় পাগল হয়ে যাচ্ছি। অদ্ভুত অদ্ভুত চিন্তা মাথায় আসে ইদানীং।
আমার খুব জ্বর উঠুক।জ্বরের ঘোরে আমি প্রলাপ বলতে থাকবো।আম্মা আমার মাথায় জলপট্টি দিয়ে দিবেন।ব্যাচের পোলাপান আমাকে দেখতে আসবে। 

ডাক্তার হব না।ডাক্তার হতে আর ইচ্ছে করে না। আমি বরং মামা হব।ক্যান্টিনের মামা।
-\’মামা একটা স্যান্ডওইচ দাও। সস একটু বেশী দিও।\’
-\’মামা আমাকে এক কাপ চা\’।
-\’মামা একটা খিচুড়ি।\’
সবসময় হুকুম পালনে ব্যস্ত থাকবো।স্যান্ডওইচ, ছমুচা, খিচুড়ি।চা, কফি, জুস।
কখনো মন খারাপ হলে দৌড়ে ডিসেকশন হলে চলে যাব। দিনেশ দা\’র কাছে।
-দাদা, ও দাদা।
কে?
-আমি, দাদা। ফয়সাল।
বলেন।
-দাদা, ডিসেকশন খোলা লাগে যে একটু।
কেন?
-ভিসেরা দেখব দাদা।
এখন দেখা যাবে না।পরে আসেন।
-আরে দাদা আসেন তো। কথা বাড়ায়েন না।
আমি দাদার হাতে ২০ টাকার একটা নোট গুজে দিবো।দাদা খুশি মনে ডিসেকশন রুম খুলে দিবেন।
আমি আধা ডিসেকশন করা সেই বডিটার পাশে যাব।
সেই ইংগুইনাল লিগামেন্ট।
সেই এক্সটার্নাল অবলিক।
আমার পুরনো দিনের কথা মনে পড়ে যাবে।সেদিন এন্টেরিয়র এবডোমিনাল ওয়ালের আইটেম ছিল।
আমরা বডিটেকে ঘিড়ে দাড়িয়েছিলাম।আমি, আমার বাম পাশে জয়ন্ত।
জয়ন্ত বিশ্বাস।
নড়াইল ভিক্টোরিয়া কলেজ।
নড়াইল।

আমার ডানে মেহরীন।মেহরীনের পাশে ওসমান গনি। ওসমানের ওপাশে নেতা নাঈম। নেতার পাশেই মামা।সাইফুল মামা।

মেহরীনকে আমরা পচাতাম খুব
\’এই মেহরীন,ওসমানের পাশে তোকে খুব মানায়।\’
-\’Shut Up.  চড়ায়ে দাত ফালায়ে দিব।\’
ওসমানকেও পচানো হত।
-এই ওসমান, মেহরীন কে দেখসো?
-এই ওসমান, মেহরীন নাকি তোমাকে খুজতেসে।

ম্যাম প্রশ্ন করলেন, Rectus Sheath এর একদম নিচের পার্টটার এন্টেরিয়র ওয়াল ফর্ম করে কে?
বললাম, \’aponeurosis of the the transversus abdominis & anterior lamella of internal oblique muscle\’.

জয়ন্তকে দেখিয়ে,তুই বল।
\’By the aponeurosis of all three flat muscles\’- জয়ন্তের ঝটপট উত্তর।

আমার দিকে তাকিয়ে, \’পড়ে আসিস নাই কেন?\’
আমি অপরাধীর দৃষ্টিতে একনজরে বডির দিকে তাকিয়ে থাকি।
\’তোর অধপতন আমি ঠেকাইতে পারতেসি না ফয়সাল। চন্দনা ম্যাম তোর এই অবস্থা দেখলে হার্টফেল করে মারা যাবেন\’।

হঠাত মশার কামড়ে চমকে উঠবো হয়তো। তখন হয়তো অনেক ভালো ভালো ভিসেরা থাকবে। লার্জ গাটের ভিসেরা। হার্টের ভিসেরা। তখনকার ভিসেরায়  হয়ত Taenia Coli স্পষ্ট দেখা যাবে।
তখনকার স্যারেরাও হয়ত ভিসেরা ধরা নিয়ে খুব কড়াকড়ি করবেন।
আরেকটু মিডিয়ালি ধর।
লোয়ার পোলটা একটু ল্যাটারালি।

ভাল্লাগেনা।
পড়তে বসি না আজকে চার দিন।আজকে বসছিলাম। কিন্তু স্থিতি জড়তা।পড়া হল না। সকালে লাইব্রেরীতে গেলাম পড়তে।পড়া হল না।
শনিবার এবডোমেন কার্ডের ভাইভা ছিল আমাদের ব্যাচ এর।রোবাবার বি ব্যাচ এর।সোমবার সি ব্যাচ এর।

\"image\"

সিলিন্ড্রিক্যাল এই কিউবটা কেনার সময় ভেবেছিলাম মোটামোটি এক সপ্তাহ একে ভালবাসবো।
নাহ, ১৪ মিনিটেই ভালোবাসা খতম।

একটা লাইন খুব মনে পড়ছে।
\’ভালোবাসা কি জিনিস আমি জানি না, কিন্তু আমি বুকের মধ্যে গোপন ভালোবাসা পুষেছি\’।

Tags:

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top